করোনায় আটকে পরীক্ষা, সেশনজটের শঙ্কা রাবি শিক্ষার্থীরা
১৫ অক্টোবর ২০২০ ০৮:২৯
রাবি: করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও (রাবি)। শুরুতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এরপর দফায় দফায় সেই মেয়াদ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত গত সাত মাসেও আর বিশ্ববিদ্যালয় খোলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুয়েকটি করে কোর্স বাকি থাকতেই স্থগিত হয়ে যায় বিভিন্ন বর্ষে চলমান ফাইনাল পরীক্ষা। এ কারণে উভয় সংকটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এদিকে, সেশনজট এড়াতে গত ৯ জুলাই থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন অসমাপ্ত পরীক্ষা দিতে পারছেন না, অন্যদিকে সব কোর্সের পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় তারা অংশ নিতে পারছেন না চলমান অনলাইন ক্লাসেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা সংকটে ছুটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিভাগ সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করলেও কিছু বিভাগ পরীক্ষার মাঝামাঝিতে এসে আটকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের প্রথম ও চতুর্থ বর্ষ এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষ ছাড়া বাকি সব বর্ষের পরীক্ষা আটকে আছে। একইভাবে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্স বিভাগের লেভেল ফোর সেমিস্টার টু-এর পরীক্ষাও ঝুলে আছে। আবার পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউমান রিসোর্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ এবং ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষাও অসম্পন্ন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনে শেষ করার ঘোষণা দেয় রাবি প্রশাসন। তবে ঘোষণা দিয়েই দায় সেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত সেই পরীক্ষা নেওয়ার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চতুর্থ বর্ষের একটা পরীক্ষা বাকি থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে আমরা কোনো চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছি না। করোনার জন্য শিক্ষাজীবন আর চাকরি নিয়ে উভয় সংকটে পড়তে হচ্ছে আমাদের।’
পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আমান উল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেছে। আবার কোনো বিভাগের পরীক্ষা শুরুই হয়নি কিংবা কারও শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি আছে। নানাবিধ জটিলতায় আটকে আছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অসমাপ্ত পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া দরকার। এ বিষয়ে রাবি প্রশাসনের গ্রহণযোগ্য ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা এখন সময়ের দাবি।’
আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ না হলেও থেমে নেই কিছুই। শুধু থমকে আছে শিক্ষা কার্যক্রম। দুয়েকটি কোর্সের পরীক্ষার জন্য তাদের সবকিছু আটকে আছে। পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় ফল প্রকাশিত হচ্ছে না। পরীক্ষা অসমাপ্ত থাকায় একদিকে তারা যেমন অনলাইনে পরবর্তী বর্ষের ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না, অন্যদিকে রয়েছে দীর্ঘ সেশনজট আর চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. ফকরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো বাকি রেখে পরবর্তী বর্ষের ক্লাস শুরুর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আমরা সব শিক্ষার্থীর কথাই ভাবছি। বিশেষ করে যাদের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ভাইভা বা টেবুলেশন শিট প্রস্তুত না হওয়ায় সম্মানের ফলপ্রকাশ আটকে আছে, তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’
তিনি জানান, আগামী ২৭ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভায় পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আটকে থাকা পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবিশ্বে করোনা মহামারি চলছে। এ সময়ে পরীক্ষা নেওয়াও কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরকারি ঘোষণা এলেই কেবল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। তাছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সীমিত পরিসরে তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।