নতুন ‘দুশ্চিন্তা’র নাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
১৫ অক্টোবর ২০২০ ১০:০৩
ঢাকা: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে সাত মাসের দুশ্চিন্তার অবসান হয়েছে গেল সপ্তাহে। পরীক্ষা না নিয়েই সব শিক্ষার্থীকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ করা হবে— পরীক্ষা হওয়া না হওয়ার দোলাচল কাটিয়ে এ সিদ্ধান্ত স্বস্তি দিয়েছে পরীক্ষার্থীদের। তবে নতুন ‘দুশ্চিন্তা’ হয়ে তাদের সামনে এবার আবির্ভূত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এইচএসসির পর এই পরীক্ষাটিও যদি বাতিল করা হয়, তাহলে মাথায় বাজ পড়বে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর। আর পরীক্ষা নেওয়া হলেও সেটি কিভাবে নেওয়া হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তারা। স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টি এখন তাদের কাটছে চরম উদ্বেগ আর অস্বস্তিতে।
শিক্ষার্থীদের এমন উদ্বেগ আর অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা। কেননা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা হবে কি না— সেটি নিয়ে এখনো দ্বিধায় আছেন সংশ্লিষ্টরাই। বিশেষ করে শীতে যদি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে পড়ে, তাহলে পরীক্ষা নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বেশিরভাগ শিক্ষাবিদ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনও ঝুঁকির মধ্যে শারিরীক উপস্থিতিতে পরীক্ষা না নেওয়ার চিন্তা করছেন জোরালোভাবে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ নাকি সমন্বিত উপায়ে হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কেউ। এছাড়াও পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতি ও ফল মূল্যায়ন কেমন হবে, এসব বিষয় নিয়েও নিশ্চিত করে কিছু কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা এখনো ডিসেম্বরে এইচএসসির ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন। ফল প্রকাশের পরই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সভায় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা তুলে ধরবেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে বা মার্চ মাসে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হতে পারে। এর আগে জানুয়ারি থেকেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরকিল্পনা শুরু করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেক্ষেত্রে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকারও মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বন্ধ। অনলাইনে ক্লাস চলছে, তবে অফিস কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে বলা চলে। এর মধ্যেই আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছি। পরিকল্পনাও করছি। আপাতত এটা বলা চলে যে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। তবে আমরা সময়টাকে গুরুত্ব দিতে চাই। শিক্ষার্থীদের ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না যেটি তাদের সহজাত জীবনকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। আমাদের অবশ্যই একটি সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে হবে, যে প্রক্রিয়াতে ভর্তি পরীক্ষার কষ্ট কমবে, আবার ভর্তির তালিকা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বাদও পড়বে না।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে সবকিছুই জটিল হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই যতটা সহজভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, ততটা সহজভাবেই আমরা শুরু করতে চাচ্ছি। ভর্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অ্যাডমিশন কমিটি, ডিনস কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করেই এসব সিদ্ধান্ত নিবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
তবে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যরা ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে খোলাখুলিভাবে কিছু না বললেও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর সারাবাংলাকে জানালেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কাজ করছেন তারা। তিনি বলেন, এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চাই। কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির জন্য একটি এবং সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আমরা আরেকটি গুচ্ছ করব। প্রথম দু’টির জন্য দু’টি পরীক্ষা নিয়ে শেষেরটির জন্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজ— এ তিনটি পরীক্ষা হবে। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে সম্মিলিত মেধা তালিকা দেওয়া হবে।
তবে ইউজিসির এই সিদ্ধান্ত মানবে না বলে আগেই নাকচ করে দিয়েছে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর একই সিদ্ধান্ত দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বুয়েট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও জানিয়ে দেয়, তারাও ঢাবি-রাবি’র সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত। সেক্ষেত্রে ইউজিসি গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাইলেও সেটি আদতে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়টি নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় গত বছরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে তবেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে শতাধিক। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে।