১০ মাসে ৬ বার বদলি, আতঙ্কে গণপূর্তের প্রকৌশলীরা
১৬ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫৮
ঢাকা: যদি প্রশ্ন করা হয়, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ১০ মাসের মধ্যে কতবার বদলি করা যায়? হয়তো জবাব আসবে, সাধারণত একেকজন কর্মকর্তাকে তিন বছর পর বদলি করা হয়। একবছর বা দুই বছরের মাথাতেও কাউকে কাউকে বদলি করা হয়ে থাকে, সেটিও প্রয়োজন অনুযায়ী। আবার এমনও হতে পারে, তিন বছরে দুই ওবার বদলি করা হয়ে থাকে। কিন্তু একজন সরকারি কর্মকর্তাকে যদি ১০ মাসের ব্যবধানে ছয়বার বদলি করা হয়, তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়ায়? ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে গণপূর্ত বিভাগে। এখানে অন্তত দু’জন প্রকৌশলীকে ১০ মাসের মধ্যে ছয়বার করে বদলি করা হয়েছে! অথচ এই বিভাগেই এমনও কর্মকর্তা আছেন, যাকে গত ২০ বছরে একবারও বদলি করা হয়নি!
গণপূর্ত অধিদফতরের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীকে এভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিকবার বদলির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে দু’জন প্রকৌশলীকে ১০ মাসের মধ্যে বদলি করা হয়েছে ছয় বার। কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে একের পর এক বদলির আদেশে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন প্রকৌশলীরা।
এরকম বদলি আদেশের বেশকিছু নথি সারাবাংলার হাতে এসেছে। সেসব নথি থেকে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম বাকী ইবনে হাফিজকে ঢাকা গণপূর্ত উপবিভাগ-৫ থেকে খুলনা গণপূর্ত উপবিভাগ-৩-এ বদলি করা হয়। এর মাত্র ৭ দিনের মাথায় ১২ জানুয়ারি খুলনা থেকে ঢাকা-৪-এ বদলি করে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২ মার্চে আরেক আদেশে ঢাকা-৪-এ রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয় তাকে। এরপর গত ৩১ আগস্ট এক আদেশে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ রিজার্ভ থেকে নোয়াখালী গণপূর্ত উপবিভাগ-১-এ বদলি করা হয় ওই প্রকৌশলীকে। সবশেষ গত ৫ অক্টোবর নোয়াখালী থেকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪-এ সংযুক্ত করে এবং একইদিন তাকে বান্দরবানের লামা গণপূর্ত উপবিভাগে বদলি করা হয়।
এর আগে, ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ থেকে গোলাম বাকী ইবনে হাফিজ পদোন্নতি পেয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা গণপূর্ত উপবিভাগ-৫-এ পোস্টিং পান।
গোলাম বাকী ইবনে হাফিজের মতো আল আমিন নামে এক নির্বাহী প্রকৌশলীকেও একইভাবে গত ১০ মাসে ৫/৬ বার বদলির প্রমাণ পাওয়া গেছে নথিতে। এছাড়া ওয়াহিদ বিন ফরহাদ, সালেহ উদ্দিন আহমেদ, মো. হেলাল উদ্দিন, কামরুল হাসান, কাজী শরীফ উদ্দিন আহমেদ, আল আমিন, মো. নুরুল হাসান, আবু সায়েম খান সহ ১০/১৫ জন প্রকৌশলীকে গত ১০ মাসে একাধিকবার বদলির অভিযোগ উঠেছে।
বদলি হওয়া প্রকৌশলীদের মধ্যে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম বাকী ইবনে হাফিজকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আর নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বাকিরাও মন্তব্য করতে সম্মত হননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, গণপূর্তের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন এই বদলির নেপথ্যে। তাদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন) মো. গিয়াস উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) নন্দিতা রাণী সাহা ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কল্যাণ কুমার কুণ্ডু। আর এই বদলির পেছনে আছে মোটা অঙ্কের লেনদেন। আর সেই লেনদেনের সূত্র ধরেই বিভিন্ন কার্যালয় থেকে বদলি করে কিছু প্রকৌশলীকে এনে বসিয়েছেন নিজেদের পছন্দের স্থানগুলোতে। অন্যদিকে কাউকে কাউকে কিছুদিন পরপরই বদলি করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন এক কার্যালয় থেকে অন্য কোথাও।
১০ মাসে ছয় বার বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের সংস্থাপন শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নন্দিতা রাণী সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ রকম হয়েছে নাকি? কার বেলায় হয়েছে বলবেন?’
নথির কথা উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়ে থাকলেও আমার কোনো হাত নেই। যা হয়েছে সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই হয়েছে। আপনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
নিয়োগের পর আপনিও তো গত ২০ বছর ধরে একটানা ঢাকায় চাকরি করছেন? আপনার তো কোথাও বদলি হলো না— এমন প্রশ্নের জবাবে নন্দিতা রাণী সাহা বলেন, ‘আমার চাকরির বয়স ২০ এর একটু কম হয়েছে। তবে বদলি হয়নি। সেটি ভিন্ন ব্যাপার।’
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন) মো. গিয়াস উদ্দিনকে কয়েকবার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ছাড়া এ গণপূর্তমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে বুধবার (১৪ অক্টোবর) ও বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।