Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোনো মানুষ ঠিকানাহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী


১৫ অক্টোবর ২০২০ ২২:৩৫

ঢাকা: প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের সবদিকে বিশ্বের সঙ্গে সবসময় তাল মিলিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষকে একটা ঠিকানা দিতে হবে, কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ৭টি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় যুক্ত হয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রেনিংটা আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে কিন্তু একটা প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। যদিও ১৯৯৬ সালে আসার পর থেকেই এই চেষ্টাটা করে যাচ্ছিলাম। আমাদের সাভারে লোকপ্রশাসন কেন্দ্র সেটাকে আরও আধুনিক করা, উন্নত করা, যুগোপযোগী করার মতো জায়গা সেখানে আছে।’

সেই জায়গাগুলো সুরক্ষিত করেই একটা সুন্দর কমপ্লেক্স গড়ে তোলার কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে দেখেছি আমি জানি না, বারবার বলা সত্ত্বেও আমাদের অফিসারদের মধ্যেই অনীহার ভাবটা একটু বেশি ছিল। কেন জানি উদ্যোগই নিতে চান না! যাই হোক, অবশেষে আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছি। সেখানে খুব আধুনিক এবং সুন্দর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ আমরা একটা কমপ্লেক্স গড়ে তুলছি। সেখানে সুন্দরভাবে ট্রেনিং এবং সেই ট্রেনিংগুলিতে আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে যে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকেও কিন্তু ট্রেনিং থেকে শুরু করে সবকিছুই নতুনভাবে নিতে হবে। অর্থ্যাৎ এক বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সবসময় তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই এরইমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা চাচ্ছি যে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটা চমৎকারভাবে গড়ে উঠবে, সেটা যেমন দৃষ্টিনর্ন্দন হবে, মানুষের যেন চোখে পড়ে দেখার মতো, আর সেখানে ট্রেনিংটাও যেন উন্নতমানের হয়, ট্রেনিংপ্রাপ্ত কর্মচারীরা যেন সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। আমি চাই কাজটা যেন একটু দ্রুত শেষ হয়, সেটাই চাইব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ২০১৫ সালে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়ার কথা তুলে বলেন, শুধু বেতন বাড়ানো না অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও দিয়েছি। কারণ যারা কাজ করবেন তাদের যদি সংসারে টানাটানিই থাকে, তাহলে আমার দেশের জন্য কাজ করবেন কিভাবে, মানুষের জন্য কাজ করবেন কীভাবে? সেটা বিবেচনা রেখেই সকলের বেতনভাতা যেমন বাড়িয়েছি পাশাপাশি সকলকে আমরা ব্যাংকে স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছি। যাতে ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরি করতে পারে। অথবা গাড়ি ক্রয় করতে পারে, সে ধরনের নানা সুযোগ সুবিধা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালও তৈরি করে দিয়েছি।’

‘আমরা চাই যে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়েই আমাদের কর্মচারীরা দেশের সেবা করবে, জনগণের সেবা করবে সেটাই আমার লক্ষ্য’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষকে ঘর তৈরি করে তার একটা ঠিকানা দিতে হবে। কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। কোনো শিশু পথশিশু থাকবে না। প্রত্যেক শিশুর একটা ঠিকানা হবে এবং সেও লেখাপড়ার সঙ্গে তার প্রশিক্ষণ এবং তার কর্মসংস্থাপনের ব্যবস্থা করে যাতে নিজের জীবনে দাঁড়াতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমাদের করে দিতে হবে। আমাদের যেহেতু ভূখণ্ড খুবই সীমিত, জনসংখ্যা খুব বেশি । সেই কারণেই আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেকটা গ্রামে আমরা সেখানে যেন সব ধরনের শহরের সুবিধাগুলো পায়, নাগরিক সুবিধা যেন গ্রামে বসে মানুষ পায়, সেভাবে আমরা গ্রামগুলোকে গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ২০০৮ নির্বাচনি ইশতেহার ছিল। আমরা প্রকৃতপক্ষে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আপনাদের সঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে আমি বেরুতেই পারি না। সেখানেও আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি, কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি, এটা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলেই আমরা পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ। কাজেই বদ্বীপ অঞ্চলকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রত্যেকটা জলাধারও আমাদের সুরক্ষিত থাকতে হবে। বৃষ্টির পানিটা যেন হারিয়ে না যায়, আমাদের যথাযথ কাজে লাগে ভুগর্ভস্থ পানির স্তরটা যেন ঠিক থাকে, কারণ আমাদের দেশটা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পানির স্তর যদি নেমে যায় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি থাকে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ।’

তাই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রতিটি জলাধার, যেগুলো দখল হয়ে গেছে, দখল হওয়াগুলি আবার দখলমুক্ত ও সংস্কার করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিবেশী দেশের সাথে সীমান্ত চুক্তি করে সীমান্ত সমস্যা দূরীকরণসহ সমুদ্রসীমা অর্জনের কথা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা। কিন্তু সেই সমুদ্রসীমায় আমাদের কোনো অধিকার ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে মেরিটারিম বাউন্ডারির জন্য তিনি কিন্তু আইন করে দিয়ে যান। জাতিসংঘও কিন্তু তখন আইন করেননি কিন্তু তিনি করেছিলেন। সেটিও কোনো কার্যকর করার কোনো ভূমিকা জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া নেয়নি। তাদের এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞানই ছিল না। আওয়ামী লীগ আসার পরেই আমরা উদ্যোগ নেই। ১৯৯৬ সাল থেকে যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা উদ্ধার করি। কাজেই এই সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানো এটাও আমাদের কাজ। আমরা এভাবে একে একে বিভিন্ন সমস্যাগুলো সমাধান করে আজকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

‘আমি মনে করি, কথাগুলো বলে যাওয়া দরকার। কারণ আমাদের যেমন অতীত ইতিহাসও জানা দরকার। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটা কী? কারণ মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, আগামীদিনের চলার পথটা যাতে কণ্টককমুক্ত হয়, সুন্দরভাবে চলতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমাদেরকে কাজ করতে হবে বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিপিএটিসি’র রেক্টর মো. রাকিব হোসেন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৭০তম বুনিয়াদি কোর্সের ফলাফল হস্তান্তর করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীর হাতে সনদ বিতরণ তুলে দেন। প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অর্জন করেন নুসরাত ফারজানা, সহকারী কর কমিশনার, কর অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ, দ্বিতীয় স্থান জিয়াউর রহমান, সহকারী কমিশনার জেলা প্রশাসক কার্যালয় নাটোর, ফাহিম রহমান খান সহকারী প্রকৌশলী সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। এরপর বাকিরা তাদের সনদ হাতে দাঁড়িয়ে প্রদর্শন করেন। এবারের ৬ মাসব্যাপী কোর্সটির শেষ একমাস করোনার কারণে অনলাইনে সমাপ্ত করা হয়। যেখানে ৬৬৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে ৫০ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী সেন্টার অব এক্সিলেন্স সনদপ্রাপ্ত হন।

অনুষ্ঠানে সনদ প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষে মেহেদী হাসান কাওসার এবং মুনিয়া সিরাত নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর