কর ফাঁকি দিলে আপনি যে সব সমস্যায় পড়বেন
১৬ অক্টোবর ২০২০ ১০:২৯
ঢাকা: ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কর না দিয়ে তথ্য গোপন করেন। আইনে যদিও অনেক ফাঁক রয়েছে, তারপরও আপনি যদি সঠিকভাবে ইনকামের তথ্য না দেখান তাহলে পরবর্তীতে আপনি নিজেই সমস্যার সম্মুখীন হবেন। যত তথ্য দেখাবেন তত আপনি ক্লিয়ার থাকবে। আমাদের কর না দিয়ে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের একজন সঠিক নাগরিক হিসাবে নিয়মিত কর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বার’-এ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা আয়কর রিটার্ন পূরণ সংক্রান্ত, প্রশ্নের উত্তর পর্বের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন কনসাল (কমার্স) এবং হেড অব চেন্সারি, লস এঞ্জেলস কনসুলেট (ইউএস) এ আল মামুন এবং বিশেষ আলোচক ছিলেন যুগ্ম কর কমিশনার, পরিদর্শী বেঞ্চ-৪, কর অঞ্চল-৪ (ঢাকা) শামীমা আখতার। সারাবাংলা ডটনেটের পক্ষে ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
‘আয় কর রিটার্ন বলতে আমরা কি বুঝি’, সেই সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ‘আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে যখন কোনো ব্যক্তি তার বার্ষিক আয়-ব্যয় এবং সম্পদের তথ্যবলি যখন একটি নির্ধারিত ফর্মে উপস্থাপন করেন তখন সেটাকে আয় কর রিটার্ন বলে। আয়কর রিটার্নের কাঠামোটা একটি নির্দিষ্ট বিধি দ্বারা তৈরি এবং জাতীয় রাজস্ববোর্ডের একটা নির্ধারিত ফর্ম আছে সেখানে আপনারা আয়কর দাখিল করতে পারেন।’
যাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে সেই সব ব্যক্তিরা হলেন- যার কর যোগ্য আয় আছে এবং যাদের আব্যশিকভাবে রিটার্ন দিতে হয়। একজন করদাতার সীমা হচ্ছে ৩ লাখ, মহিলা অথবা পুরুষ যার বয়স ৬৫ বছরের উপরে তার জন্য সাড়ে ৩ লাখ, প্রতিবন্ধীর জন্য ৪ লাখ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাড়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ রয়েছে। যার কর যোগ্য আয় আছে তাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যিনি ১২ ডিজিটের একটি টিন গ্রহণ করেছেন তাকে মিনিমান রিটার্ন জমা দিতে হবে। আয়কর প্রদানের জন্য কোনো বয়সসীমা আইনে নির্ধারণ নেই। অথাৎ যিনি ৩ লাখ টাকার ওপরে অর্থ উপার্জন করেন তাকেও আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
প্রধান আলোচক কনসাল (কমার্স) এবং হেড অব চেন্সারি, লস এঞ্জেলস কনসুলেট (ইউএস) এ আল মামুন বলেন, ‘প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বর মধ্যে আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত আপনার হিসাব আয়কর রিটার্নে ডিসক্লোজ করতে হবে। যদি আপনি সময় মতো আয়কর দাখিল না করেন তাহলে পেনাল্টির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও পরবর্তী বিভিন্ন সময়ের অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে।’
যেহেতু এবার করোনাভাইরাসের কারণে আয়কর মেলা হচ্ছে না। তাই আপনার নির্দিষ্ট জোনের বুথে গিয়ে সমস্ত হিসাব বুঝে রিটার্ন জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন আলোচকরা। যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে, না হলে খালি হাতে ফিরতে হবে।
আয়কর কিভাবে জমা দিবেন, কোথাও ফরম পাবেন সেই সম্পর্কে বিশেষ আলোচক পরিদর্শী যুগ্ম কর কমিশনার শামীমা আখতার বলেন, ‘এ বছরে আয়কর মেলা হচ্ছে না। তাই যারা ঘরে বসে আয়কর জমা দিতে চান তারা www.nbr.gov.bd বা www.incometax.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারবেন। এখানে ৩ নম্বর পেজে আপনার কর রেয়াত/অব্যহতিসহ অন্যান্য বিষয় দেখানো আছে। এছাড়াও যারা অনলাইন কর দিবেন তাদের জন্য ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তির করের জন্য সব বাদ দিয়ে কিছুই না আসে, তাহলে সেই ব্যক্তিকেও ৫ হাজার টাকা ধরে কর জমা দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে আল মামুন বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মারা যান, তাহলে তার সম্পত্তিও সন্তানদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়। তাহলে সেই ব্যক্তির টিন নম্বর অফ করার জন্য আবেদন করতে পারে। অন্যথায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হলেও, তার ইনকাম কিন্তু বন্ধ হয়নি বলে তাকেও কর দিতে হবে। আবার গিফট তা বিদেশ থেকে আসুক বা অন্য কোনোভাবে, সেটা যদি বৈধ ইনকাম থেকে কেউ করে থাকেন, তাহলে তার পরিমাণ যাই হোক না কেন, সেটা কর বহির্ভূত হবে। গিফট হলে কর দিতে হবে না। কিন্তু যদি বৈধ ইনকাম প্রমাণ করা না যায়, তাহলে সেই গিফটের জন্যও কর দিতে হবে। কাজেই এই গিফটের সাপেক্ষে কিছু প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।’