‘সংখ্যালঘু হিসেবে বাঁচার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি’
১৬ অক্টোবর ২০২০ ২২:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত বলেছেন, ‘দেশের বিদ্যমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যেমন আছে, ধর্মতন্ত্রও আছে। রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে পাকিস্তানের মতো ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করে রেখেছে। কিন্তু সংখ্যালঘু হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সকল বাঙালির অধিকার সমান।’
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পুরাতন ভবনে কে বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। হিন্দু সমাজকল্যাণ পরিষদ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি উদ্বোধকের বক্তব্য রাখছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সবার সম্মিলিত রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তখন প্রশ্ন ছিল না কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ আর কে মুসলমান- সে পরিচয় সামনে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গণে আমরা তো এক থালায় বসে একসাথে ভাত খেয়েছি। আমরা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা মনে করি ধর্ম যার যার, আমাদের পবিত্র ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কিন্তু আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় আমরা মানুষ।’
‘কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানের সংবিধানের আদলে বাংলাদেশের সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক করেছে। একই ধারায় জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানে সংযুক্ত করার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে। এর লক্ষ্য একটাই, পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশেও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। আজ ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার এসেছে কিন্তু জিয়াউর রহমান ও এরশাদের প্রেতাত্মা থেকে এখনো বাংলাদেশের সংবিধান মুক্ত হতে পারেনি।’- বলেন রানা দাশ গুপ্ত
পরিষদের উপদেষ্টা সাংবাদিক প্রীতম দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, পরিষদের হাটহাজারীর সাধারণ সম্পাদক ডা. অশোক দেব, সাংবাদিক রূমন ভট্টাচার্য, নারী নেত্রী রুমকি সেনগুপ্ত ও উজ্জ্বল চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা হিন্দু সমাজকল্যান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উদ্বোধন ঘোষণা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।