খাল-জলাশয় খনন শিখতে বিদেশ যাবেন ৬ কর্মকর্তা, খরচ ৪৮ লাখ টাকা
১৮ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৫০
ঢাকা: খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পে এবার বিদেশ যাবেন সরকারের ৬ জন কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফর নামে এ ভ্রমণখাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪৮ লাখ টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তার পেছনে খরচ পড়বে ৮ লাখ টাকা। ‘ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তম দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলায় সেচ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ব্যয় প্রস্তাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫১ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, এই বিদেশ সফরের প্রস্তাবে কোনো আপত্তিও জানায়নি পরিকল্পনা কমিশন। কোভিড-১৯ শুরুর আগেই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।
সেখানে বলা হয়েছিল প্রকল্পের আওতায় ছয় জন (এক ব্যাচ) কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফর বাবদ মোট ৪৮ লাখ টাকার সংস্থান রাখতে হবে। তবে এই প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিষয়, ব্যাচভিত্তিক দপ্তর উল্লেখসহ প্রশিক্ষনার্থীর সংখ্যা, প্রশিক্ষণ দিবসের সংখ্যা, দেশের নাম ইত্যাদি ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করতে হবে। এই সুপারিশ মেনেই বিদেশ সফরের প্রস্তাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ও।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড.জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, টাকা বাঁচাতে সরকার এরইমধ্যে প্রকল্পের আওতায় গাাড় কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেক্ষেত্রে করোনা মহামারীর এই সংকটময় মুহূর্তে খাল ও জলাশয় পুনঃখনননের মতো প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফরের খাত বাদ দেওয়া উচিৎ ছিল। কেননা এক্ষেত্রে ব্যাপক অর্থের অপচয় ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করার আগে ব্যয়ের খাতগুলো পুনর্মূল্যায়ন করার প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনা কমিশনের। কিন্তু সেটি করা হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলায় ২০০ কিলোমিটার খাল, ৬০টি জলাশয় পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া ১৬৫টি বিদ্যুৎ সৌরশক্তি চালিত লো-লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির সহায্যে সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা হয় গত বছরের ১৮ নভেম্বর। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) যে কোনো সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডি)।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়,বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট এলাকায় মোট আবাদযোগ্র জমির পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ ১৬ হেক্টর। তারমধ্যে প্রায় ৫ লাখ ২৮ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে এবং অবশিষ্ট প্রায় শূন্য দশমিক ৮৮ লাখ হেক্টর জমি সেচ বহির্ভূত রয়েছে। সেচ বহির্ভূত জমির মধ্যে থেকে ২৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে সেচ সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থাকা সত্ত্বেও পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজ ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছেনি। তাই আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত রয়েছে। নদীর সঙ্গে সংযোগ খালসহ অন্যান্য খালগুলো ও জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার করা হবে। এতে সেচ কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর চাপ কমে যাবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ৬০টি জলাশয় পুন;খনন, ২৫টি সাবমার্জড ওয়্যার, ১৬৫টি ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ, এক হাজারটি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণ, ৬০টি সৌরশক্তি চালিত পাতকূয়া, ১৬৫টি প্রি-পেইড মিটার ক্রয় এবং ৯টি অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ ছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ধরে রাখাসহ দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।