‘কোভিড কবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে কেউ জানে না’
১৯ অক্টোবর ২০২০ ০০:০৭
ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, কোভিড কবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে সেটা কেউ জানে না। কোভিড যুদ্ধ চলছে এবং চলবে। করোনা ভাইরাসের টিকা কবে আসবে তা কেউ জানে না। এ কারণে সেকেন্ড ওয়েভ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
রোববার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোভিড-১৯ মহামারিতে সার্জনদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে পৃথিবীর আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। তবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। কোভিড সামাল দিতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এখন পর্যন্ত ভালো কাজ করেছে।’ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে জানিয়ে চিকিৎসকসহ সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ সামনে আছে। সরকার নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই কমেছে। তবে এখনও শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের সুরক্ষিত রেখে সবাইকে কাজ করতে হবে। সেবা বন্ধ রাখা যাবে না।’
চিকিৎসকদের প্রতিটি সংগঠন তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, কেউ তাদের সার্ভিস বন্ধ রাখেনি মন্তব্য করে ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখন আমরা বলতে পারি, সংক্রমণের হার আমাদের কমেছে, মৃত্যুর হার কমেছে, সেবার মান বেড়েছে। মিডিয়াতে অনেক কথা হয়েছে— হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব, চিকিৎসক যাচ্ছে না, রোগী মারা যাচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু এসব সংবাদ এখন আর নেই। এটি অবশ্যই একটি অর্জন। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে, এখানে শৈথিল্য দেখানোর কোনও সুযোগ নাই। সবাইকে কাজ করতে হবে।’
ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের টিকা কবে আসবে তা কেউ জানে না। এ কারণে সেকেন্ড ওয়েভ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আশা থাকা ভালো, কিন্তু ভ্যাকসিন কবে আসবে আমরা জানি না। কোনো ভ্যাকসিন প্রোডাকশনে যায়নি। কেউ বলে না এটা এক বছর না দুই বছরে পাওয়া যাবে। এজন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কোনো রকেট সায়েন্স নয়। এই তিনটি কাজ করতে পারলে আমরা সেকেন্ড ওয়েভ থেকে হয়তো দূরে থাকব।’
র্যাপিড টেস্টের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘অনেক দিন আগে থেকে আমরা সুপারিশ করেছিলাম, র্যাপিড অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করার জন্য। অ্যান্টিজেন পরীক্ষাতে কেউ নেগেটিভ হলে তাকে আরটিপিসিআর করতে হবে, কিন্তু কেউ পজিটিভ হলে তাকে আর আরটিপিসিআর করতে হবে না। এই লোডটা কমানোর জন্য আমরা বারবার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কথা বলেছি। সেটা সরকার অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু এখনও চালু হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজনীয়তাও আমরা বুঝতে পারি। আমরা যদি অ্যান্টিবডি টেস্ট করে তাদের বের করতে পারি, তাহলে তারা ওয়ার্কফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারবে। ভ্যাকসিন যখন আসবে তখন তারা পেছনে থাকবে, আর যাদের প্রোটেকশন নেই তারা আগে পাবে ভ্যাকসিন। অনেক সুবিধা রয়েছে এই র্যাপিড অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি টেস্টে। আমি আশা করছি, বিষয়গুলো কার্যকর হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এএইচএম তৌহিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ প্রমুখ।