Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নানা সমস্যায় জর্জরিত লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টার


১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৩১

মৌলভীবাজার: আহত এবং অসুস্থ বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসার উদ্দেশে লাউয়াছড়া বনের জানকিছড়া বন বিভাগ গড়ে তুলেছে একটি রেসকিউ সেন্টার। কিন্তু জনবল, চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের অন্যতম রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট লাউয়াছড়ায় অবস্থিত ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টারটি। এটি দেশের অন্যতম অভয়ারণ্য লাউয়াছড়ায় অবস্থিত।

জানকিছড়ার রেসকিউ সেন্টারে বন্যপ্রাণী থাকলেও তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নেই কোন চিকিৎসক। প্রাণীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চিকিৎসকসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪-৫ জন লোকের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ২ জন। এরমধ্যে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জুনিয়র ওয়াউল্ড লাইফ স্কাউট ও অন্যজন বনপ্রহরী। তাদের দিয়েই জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম চলছে এই রেসকিউ সেন্টারের কার্যক্রম। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া আহত প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।

বিজ্ঞাপন

লাউয়াছড়া বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ, সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করার পর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের আওতাধীন এই বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনের জানকিছড়া ক্যাম্পের ভিতরে তৈরি করা হয় ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার। রেসকিউ সেন্টারটি তাঁরের বেড়া দিয়ে ঘেরা থাকলেও দীর্ঘদিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনগুলোর চারদিকে ঝোঁপ-জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে। দেখলে মনে হবে যেন অনেকদিন ধরে কারো পদচারণা ঘটেনি এখানে।

বিজ্ঞাপন

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জুনিয়র ওয়াউল্ড লাইফ স্কাউট ঋষু বড়ুয়া সেখানে থাকা বন্যপ্রাণীদের দেখভাল করেন। তবে তার অবর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন তাঁর সহকারী বনপ্রহরী মো. ইব্রাহিম।

জুনিয়র ওয়াউল্ড লাইফ স্কাউট ঋষু বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই রেসকিউ সেন্টারে নেই বিদ্যুৎ, নেই বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসার জন্য কোনো চিকিৎসক, এমনকি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও। আর বনপ্রহরী ইব্রাহিমের বন পাহারার বিষয়ে দক্ষতা থাকলেও এখানে রাখা প্রাণীগুলোর খাবার বণ্টন ও দেখভাল সম্পর্কে সেরকম কোনো দক্ষতা নেই।

ইব্রাহিম বলেন, ‘এই রেসকিউ সেন্টারে লোকবল থাকার দরকার পাঁচজন অথচ আমি বন প্রহরী হয়েও এই রেসকিউ সেন্টারে দায়িত্ব পালন করছি।চিকিৎসক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদেই এখানে কেউ নেই।’

অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্নতার মধ্যেই রেসকিউ সেন্টারে বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া ২টি মেছোবাঘ, ৫টি বানর ও ছোট-বড় ৩টি বার্মিজ অজগর সাপ রয়েছে। এখানে আক্রান্ত-অসুস্থ আহত প্রাণীকে উদ্ধার করে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর সেগুলোকে আবার বনের নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করার কথা। তবে প্রাণী চিকিৎসক না থাকায় গুরুতর আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এ কেন্দ্রের রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দু’জনের। এক্ষেত্রে তারা পার্শ্ববর্তী পশুসম্পদ চিকিৎসা কেন্দ্রের সহায়তা নেন।

এদিকে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ভবন পর্যন্ত। ভিতরে গেলে মনে হয় ভুতূড়ে অবস্থা।

প্রকৃতি ও সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা লাউয়াছড়া বনবিটের রেঞ্জার মোনায়েম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে রেসকিউ সেন্টারটির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ ৩ বছর ধরে চিকিৎসক না থাকায় আহত অবস্থায় কোন বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে আনলে তা পার্শ্ববর্তী পশুসম্পদ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। নতুবা বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন এবং স্থানীয় বন্যপ্রাণীপ্রেমী হৃদয় দেবনাথ, সুহেল শ্যাম এবং খোকন সিংয়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। তারাই বন্যপ্রাণীদের সুস্থ করে তোলেন।’ তবে জনবল সংকট নিরসনের জন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বন্যপ্রাণীপ্রেমী জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি হৃদয় দেবনাথ বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অনেক প্রাণী খাদ্যের জন্য লোকালয়ে চলে যায়। প্রায়শই এসব বন্যপ্রাণী স্থানীয়দের হাতে এমনকি শিকারিদের হাতে আটকা পড়ে, আহত হয়। বিরল, বিপন্ন এসব বন্যপ্রাণী রক্ষার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল ও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া জরুরি।’

জানকিছড়া বন বিভাগ জীববৈচিত্র রেসকিউ সেন্টার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর