Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা ‘হিতে বিপরীত’ হওয়ার শঙ্কা


১৯ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২৩

ঢাকা: অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো হয়নি বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও সময় নেওয়া উচিৎ। না হলে ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ‘অটো প্রমোশন’ হওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষাবিদরা চাচ্ছেন অন্তত ভর্তি পরীক্ষাগুলো ভালো ভাবে হোক।

বিজ্ঞাপন

এইচএসসি পরীক্ষায় অটো প্রমোশনে এমনিতেই মন খারাপ করেছিলেন রায়হান শরীফ। কারণ এসএসসির ফলাফল গড়পড়তা হওয়ায় এর প্রভাব পড়বে এইচএসসিতেও। যেখানে পরীক্ষা হলে হয়তো আগের চেয়ে ভালো ফল করতেন তিনি। এবার ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার খবরে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষা হলে অনেক ধরনের জালিয়াতির সুযোগ থেকে যাবে। যে সুযোগগুলো নিতে চাইবে অনেকেই!’

তিনি আরও বলেন, ‘ফল খারাপ হলেও ভর্তি পরীক্ষার নম্বর বেশি পেলে একটা সুযোগ থেকে যায়। এবার হয়তো সেই সুযোগটাও পাবো না। দেখা যাবে পরীক্ষায় অনেকে অবিশ্বাস্য ভাবে দুইশ নম্বরের মধ্যে ১৯০ বা ১৯৫ নম্বর তুলে ফেলবে। আর আমরা তুলবো ১৩০। অথচ বি-ইউনিটে ১৩০ পেলেও সাবজেক্ট পাওয়া গেছে।’

শায়লা নাসরিন বলছেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা হয় সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয়ের সর্বশেষ ও চৌকষ বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন নিয়ে। এসব প্রশ্নের উত্তর গুগল থেকে সহজেই সংগ্রহ করা সম্ভব। ঘরে বসে পরীক্ষা নিলে এই সুযোগটা সবার জন্য থাকবে। সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে শহুরে উচ্চবিত্তের সন্তানেরা। তাহলে ভর্তি পরীক্ষায় তো আার সমতা থাকলো না!’

এই দুই শিক্ষার্থী বাদেও আরও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনের ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে পুরনো নিয়মে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এমনকি বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্বিবিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই সিদ্ধান্তটিকে ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে মত দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘সময়ের সাথে সাথে আমাদের বদলাতে হবে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি এমনই এক বদলে যাওয়া সিদ্ধান্ত। তবে আমি মনে করি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবকিছু বিবেচনা করে দেখতে হয়। এখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার পরিবেশ আছে কিনা সেটি আগে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। এরপর সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু পরীক্ষা নেওয়া যায়। এসব কিছুর ফলাফর পক্ষে এলে তারপর এই সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। তার আগে কিছু করা হলে সেটি সবার জন্য মঙ্গল নাও হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এটি অনেক বড় সিদ্ধান্ত। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েকবছর ধরে কেবল গ্রাউন্ড স্টাডিই করতে হয়, যে এই কাজটি সঠিক ভাবে শেষ করা সম্ভব কিনা। এই সিদ্ধান্ত চালু করে দেওয়ার আগে আরও বিবেচনা করে দেখা উচিৎ।’

এদিকে শনিবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি হয় বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল ওই সভায় দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অংশগ্রহণ করেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্যরা।

উপাচার্যদের সংগঠন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোনাজ আহমেদ নূরের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া কঠিন হওয়ায় উপাচার্যরা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার দিকে জোর দিয়েছেন।’

তিনি জানান, পরীক্ষা নেওয়ার মতো উপযোগী একটি ডামি (নমুনা) সফটওয়্যার উপস্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। সফটওয়্যারটি তৈরির কাজ শেষ হলে সেটি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে দেখানো হবে। এরা অনুমতি দিলে এটি দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

তবে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠান রাজি হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এছাড়াও এই বৈঠকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের পর জিপিএ’র ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যে দাবি উঠেছিল সেটিও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২৩ দিন আগে ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরে এইচএসসি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার পর শিক্ষার্থীদের ‘অটো প্রমোশন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ভর্তি পরীক্ষা হিতে বিপরীত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর