Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানববন্ধনে হামলা, আটকদের সাক্ষী বানিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ


১৯ অক্টোবর ২০২০ ২০:৪০

ঢাকা: জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলার অভিযোগে শাহবাগ থানা পুলিশের আটক ব্যক্তিরা সবাই ছাড়া পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, আটক হামলাকারীদের সাক্ষী বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর ওই মামলায় পুলিশ এমন ব্যক্তিদের আসামি করেছে, যারা সেদিন ঢাকাতেই ছিলেন না!

এ পরিস্থিতিতে মামলার শিকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রায় দুইশ কিলোমিটার দূরে থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কিভাবে হামলা করলাম, সেটাই বুঝতে পারছি না! আমরা থাকলাম গ্রামে আর হামলার আসামি হলাম শাহবাগে। বিষয়টি শুনে অদ্ভূত মনে হচ্ছে। এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন করেন জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। মানবন্ধন শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে কয়েকজন যুবক এসে অতর্কিত হামলা চালান। পুলিশ এগিয়ে গেলে ওই যুবকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় শাহবাগ থানা পুলিশ।

জানা গেছে, আটক ব্যক্তিদের সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে ১৫ অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আটক হওয়া হামলাকারীদের সাক্ষী বানানো হয়। আর কালুখালী উপজেলার মদাপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, পাংশা উপজেলার মনোয়ার হোসেন জনি, সাহেদ আলী, মাসুক মন্ডল, শিশির সরকার ও নয়ন মিয়াসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

সারাবাংলার হাতে ১৪ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ওই বিক্ষোভ মিছিলে হামলার কয়েকটি ভিডিও এবং বেশকিছু ছবি এসেছে। ভিডিও ও ছবির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওতে যাদের হামলা করতে দেখা যায়, তাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন বেশ আগ্রাসী ভূমিকায়। তাদের একজন তোফাজ্জল হোসেন। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার বাড়ি কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নের চরকুলটিয়া গ্রামে। বাবা বাছের মন্ডল। জানা গেছে, তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সবাই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত।

মানববন্ধনে হামলাকারীদের মধ্যে আরেকজনের নাম মো. শামিম রহমান। বাবা মো. শহর আলী। বাড়ি একই উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে। শামিমের ছোট চাচা সাইফুল ইসলাম ইউনুস বোয়ালিয়া ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগ আছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ছাত্রদলের ক্যাডারদের দিয়ে ‘বিচ্ছু বাহিনী’ গঠন করেছিলেন। সেই ‘বিচ্ছু বাহিনী’র সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৫ আগস্টের শোকসভায় হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

ভিডিও ও ছবিগুলোতে তোফাজ্জল হোসেন ও শামিম রহমান ছাড়াও যাদের হামলা করতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে মাসুদুর রহমান টুটুল, বি এম এহতেসাম ও রাকিবুজ্জামানের নাম জানা গেছে।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি মাসুক মন্ডলের অভিযোগ— তোফাজ্জল হোসেন, শামিম রহমান, টুটুল, এহতেসাম ও রাকিবুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা টিপুর হয়ে হামলায় অংশ নিয়েছেন। তার দাবি, স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যেহেতু মানববন্ধন, সেই মানববন্ধনে হামলা চালালে সংসদ সদস্য তার লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়েছে— এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

তোফাজ্জল ও শামিমের সঙ্গে টিপুর অনেক ছবি রয়েছে দাবি করে মাসুক মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ওই সব ছবি প্রমাণ করে, টিপুই তার ছেলেদের দিয়ে হামলা চালিয়েছে। হামলার পর পুলিশ তাদের ধরে থানায় নিয়ে গেলেও ছাত্রলীগের সাবেক একজন সভাপতি ও স্বাচিপের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশে তাদের সাক্ষী বানিয়ে ছেড়ে হয়েছে। অথচ যারা হামলায় জড়িতই ছিল না, তাদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

তবে হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তোফাজ্জল হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা মানববন্ধন করছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন এসে ব্যানার টেনে নিয়ে যায় এবং হামলা করে। ওই সময় তাদের ইটের আঘাতে পুলিশ আহত হয়। এরপর তাদের লক্ষ্য করে আমিও একটি পাটকেল নিক্ষেপ করি। তারা পালিয়ে গেলে পুলিশ আমাদের ধরে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে, আসল হামলাকারী আমরা না। তখন আমাদের ছেড়ে দেয়।

একই কথা বলেন বি এম এহতেসাম। তিনি বলেন, এমপির লোকজনই সেদিন আমাদের ওপর হামলা করেছে। আসামিরা তো সবসময় অস্বীকারই করবে। তারা সবাই ঢাকাতেই রয়েছে।

তোফাজ্জল-এহতেসামদের নেতা হিসেবে যে সোহেল রানা টিপুর নাম এসেছে, সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয়েছে তারও। তিনি বলেন, ভিকটিম পরিবারগুলোর একটি মানববন্ধন হয়েছে, সেটি জানি। তবে ওই দিন আমি ঘটনাস্থলে (প্রেস ক্লাবে) ছিলাম না। আমাকে জড়িয়ে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। মামলা হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। যারাই জড়িত হোক না কেন, তারা আইনের আওতায় আসুক— এটাই আমি চাই। আমি কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চাই না। অনেকের মতো আমিও রাজনীতি করি। সুতরাং কেউ কেউ হয়তো ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে থাকতে পারে।

জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশীদকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে থানার একজন পুলিশ পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে আনা হয়েছিল। তাদের দাবি, তারা মানববন্ধন করতে এসেছেন। তাদের ব্যানার কেড়ে নিলে তারাও প্রতিহতের চেষ্টা করেছেন। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমপির বিরুদ্ধে মানববন্ধন প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন হামলাকারী আটক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর