‘২০২১ সালের আগে ভ্যাকসিন আসছে না, স্বাস্থ্যবিধিই ভরসা’
১৯ অক্টোবর ২০২০ ২৩:২৩
ঢাকা: সাধারণত কোনো রোগের প্রতিষেধক, অর্থাৎ ভ্যাকসিন বাজারে আনতে সময় কমপক্ষে পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। তারপরও বিশ্বব্যাপী যেভাবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে, তাতে হয়তো ২০২১ সাল নাগাদ ভ্যাকসিন বাজারে আসবে। এর আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে ভ্যাকসিন বাজারে এলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তেমনটিও মনে করছেন না তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারণ ২০২১ সালে কোনো ভ্যাকসিন বাজারে এলেও এর স্বল্প মেয়াদি বা দীর্ঘ মেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো ২০২৫ সালের আগে জানা সম্ভব হবে না। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে সামনে শীতকাল রয়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধির ওপরেই ভরসা রাখতে হবে।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। সারাবাংলা ফোকাসের এ পর্বে ‘ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ শিরোনামে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন মেট্রোপলিটন লার্নিং ইনস্টিটিউটের (নিউইয়র্ক) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাসুদুল হাসান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ও গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানী।
আলোচনায় অধ্যাপক ডা. মাসুদুল হাসান বলেন, ২০২১ সালের আগে বাজারে কোনো ধরনের ভ্যাকসিন আসা সম্ভব নয়। আর ভ্যাকিসের যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, সেগুলো আমরা ২০২৫ সালের আগে জানতে পারব না। বিশেষ করে মডার্না, অক্সফোর্ড ও ফাইজার— এই তিনটি কোম্পানির ভ্যাকিসের ট্রায়াল চলছে। আবার এসব কোম্পানির ট্রায়ালে বেশকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। সেজন্য কিছু কিছু ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি ভ্যাকসিন বাজারে আনা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ফাউচি’র বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ডা. মাসুদুল বলেন, ড. ফাউচি কিন্তু জোর দিয়ে বলেছেন, ভ্যাকসিন কবে আসবে— সেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করব না। তবে সামনের শীতে একটা বড় ধাক্কা আসবে। সেজন্য যতক্ষণ পর্যন্ত একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে না পারছি, আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ভ্যাকসিন ট্রাকার ভ্যাকসিনের তথ্য দিয়ে থাকে। পৃথিবীতে ১৪২টি ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করেছে। ‘ফেজ-১’-এ রয়েছে ৩৫টি, ‘ফেজ-২’তে রয়েছে ১৯টি এবং তৃতীয় ধাপে রয়েছে ১১টি ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনের প্রথম শর্ত— এটি নিরাপদ ও কার্যকর হতে হবে। কিন্তু ভ্যাকসিনের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি। একইসঙ্গে কোন ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম, সেটিও কিন্তু এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, আবার ভ্যাকসিন এলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, সেটি কিন্তু নয়। কারণ সাধারণত একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে কমবেশি ৫-১০ বছর সময় লাগে। বিজ্ঞানের ধাপগুলো এড়িয়ে কোনো ভ্যাকসিন দ্রুত বাজারে আনাটাও ঠিক হবে না। এছাড়া করোনা প্রতিরোধ করতে গিয়ে ভ্যাকসিনের কারণে যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে সেটার ক্ষতি হবে দ্বিগুণ। তাই কোনো ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধির ওপরই ভরসা রাখতে হবে। বিশেষ করে যেহেতু শীত সামনে, তাই অবশ্যই আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত আমাদের।
দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আমরা আশা করছি আমাদের ভ্যাকসিনটি আগামী বছরের শুরুর দিকে বাজারে আসবে। ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় যদি ট্রায়াল হয়, তাহলে আগামী বছরের শুরুতেই ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাধারণ প্রক্রিয়ায় হলে আরও বেশি সময় লাগবে।
অধ্যাপক ডা. মাসুদুল হাসান করোনাভাইরাস করোনার ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ গ্লোব বায়োটেক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ডা. লেলিন চৌধুরী ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সারাবাংলা ফোকাস স্বাস্থ্য সুরক্ষা স্বাস্থ্যবিধি