পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাই প্রেশার রোটরের নির্মাণ কাজ শেষ
২২ অক্টোবর ২০২০ ২৩:১৯
ঢাকা: দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে পাবনার রূপপুরে। রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রাংশ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য হাই প্রেশার রোটরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
রাশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) এ তথ্য জানান হয়েছে। মিশন থেকে বলা হয়, রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রাংশ নির্মাণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি তদারকির জন্য রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান সেইন্ট-পিটার্সবার্গ, পেট্রোজাভোদস্ক ও ভলগাদনস্কে অবস্থিত বিভিন্ন কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
সেইন্ট-পিটার্সবার্গে অবস্থিত পাওয়ার মেশিন গ্রুপের চারটি কারখানায় উৎপন্ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। পাওয়ার মেশিন কোম্পানির তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য টারবাইন ও জেনারেটর, পরিবহন এবং সমুদ্রগামী জাহাজের যন্ত্রাংশ এবং ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন বৃহৎ যন্ত্রপাতির নকশা প্রণয়ন এবং উৎপাদনে ১৬০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
পাওয়ার মেশিন গ্রুপের এল এম জেড কারখানাটি রাশিয়ার বৃহত্তম টারবাইন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে এল এম জেড কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের টারবাইনের জন্য নির্মাণাধীন হাই প্রেশার রোটর এবং চারটি লো-প্রেশার রোটরের নির্মাণ প্রক্রিয়া দেখানো হয়। হাই প্রেশার রোটরের নির্মাণ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
পাওয়ার মেশিনের টুরবা অ্যাটমগ্যাজ কারখানায় উৎপন্ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের টারবাইনের জন্য হাই প্রেশার সিলিন্ডার, লো-প্রেশার সিলিন্ডার, কনডেনসার সেট, লো-প্রেসার হিটার এবং আরও কিছু যন্ত্রপাতি। ইলেকট্রসিলা কারখানায় তৈরি হচ্ছে জেনারেটর এবং পাওয়ার ম্যাশিন, টোশিবা কারখানায় প্রস্তুত হচ্ছে ট্রান্সফরমার।
কারখানাটির কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ে ও নির্বিঘ্নে রূপপুর পারমাণবিক দ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজ সম্পন্নের জন্য কারখানার উৎপাদন শাখার উপপ্রধানের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ ওয়ার্কিং গ্রুপ নিয়মিত কাজ করছে। এসময় রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বলেন, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পেট্রোজাভোদস্কমাশ কারখানাটি পেট্রোজাভোদস্ক শহরে অবস্থিত রোসাটমের কারিগরি বিভাগ অ্যাটম-এনার্গোম্যাশের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। শাখার পরিচালক পাভেল মারচেঙ্কো রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। পেট্রোজাভোদস্কমাশ কারখানা পরিদর্শনের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পাভেল মারচেঙ্কো কারখানার অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে অবহিত করেন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন যন্ত্রপাতি নির্মাণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বর্ণনা করেন।
পরিচালক বলেন, সর্বোচ্চ গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশের জন্য যন্ত্রপাতি নির্মাণ সম্পন্ন করা তাদের জন্য সম্মানের এবং এটি তাদের মহান দায়িত্বও।
পেট্রোজাভোদস্কমাশ কারখানাটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য চারটি রিয়্যাক্টর কুলান্ট পাম্পের স্ফেরিক্যাল হাউজিং ও স্পেসার, দ্বিতীয় ইউনিটের চারটি স্ফেরিক্যাল হাউজিং ও স্পেসার, প্রথম ইউনিটের প্রাইমারি সার্কিট পাইপলাইন, দ্বিতীয় ইউনিটের আটটি প্যাসিভ কোর ফ্লাডিং সিস্টেম এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। কারখানাটি থেকে এরই মধ্যে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর কুলান্ট পাম্পের একটি স্ফেরিক্যাল হাউজিং রূপপুরে সরবরাহের জন্য সমুদ্রবন্দরে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় স্ফেরিক্যাল হাউজিংয়ের কাজও শেষ হয়েছে।
রিয়্যাক্টর কুলান্ট পাম্প একটি সেফটি ক্লাস-১ ইকুইপমেন্ট। এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রিয়্যাক্টর এবং স্টিম জেনারেটরের মধ্যে কুল্যান্ট প্রবাহ নিশ্চিত করে। প্রতিটি স্ফেরিক্যাল হাউজিংয়ের উচ্চতা ৩.৫ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার এবং ভর ৩৩ টন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপদ পরিচালনার লক্ষ্যে আল্ট্রাসনিক টেস্ট, রেডিওগ্রাফিক টেস্ট, হাইড্রলিক টেস্ট ও অন্যান্য নন-ডেস্ট্রাক্টিভ ও ডেস্ট্রাক্টিভ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি যন্ত্রের নির্ভরযোগ্যতা ও স্ট্রেন্থ নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করা হয়।
অ্যাটম-এনার্গোম্যাশের ভোলগোদোনস্ক শাখা অ্যাটোমম্যাশ কারখানাটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিউক্লিয়ার আইল্যান্ডের ভেসেল ও হিট-এক্সচেঞ্জ যন্ত্রপাতি তৈরির শীর্ষস্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা যেটি ১৯৭৬ স্থাপিত। অ্যাটোমম্যাশ কারখানা পরিদর্শনের শুরুতে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ইগর ভি কতভ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ভোলগোদোনস্কের অ্যাটোমম্যাশ কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র পারমাণবিক চুল্লী এবং স্টিম জেনারেটরসহ প্রটেকটিভ টিউব ইউনিট, কোর ব্যরেল ও কোর ব্যফেল নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লী এবং চারটি স্টিম জেনারেটর নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুত করে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। নির্মাণাধীন অন্যান্য যন্ত্রাংশ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা হবে। কারখায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বলেন, বাংলাদেশ-রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যন্ত্রাংশ তৈরি রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হাই প্রেশার রোটর