Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা


২৩ অক্টোবর ২০২০ ২২:১৫

ঢাকা: বছরের শুরুতে শিক্ষা জীবনে পা রেখেছিল মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থী মল্লিকা সরকার (৪)। বড় বোনের সঙ্গে যে আড়াই মাস স্কুলে যাওয়ার সময় পেয়েছিল, তাতে রীতিমত পড়াশোনা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাকে ঘরে পড়তে বসানো মুশকিল হয়ে পড়েছে, বললেন তার বাবা-মা।

একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শতাব্দী সিকদার (১০)। প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হতে তার প্রস্তুতি ছিল বিগত বছরগুলোর চেয়ে সবচেয়ে ভালো। করোনার কারণে একদিকে স্কুল বন্ধ তারওপরে পিইসি পরীক্ষা না হওয়াতে পড়াশোনায় মনযোগ কমে গেছে বলে জানালেন তার বাবা। পাশাপাশি আচরণগত পরিবর্তনও এসেছে বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেলেও শিশুরা বেশিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের পড়াশোনা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি তারা মানসিকভাবেও ভালো নেই। অভিভাবক ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ওপর।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে শিশুরা পড়াশোনা করে এই সময়টিতে শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি তারা সামাজিক নানা আচরণও শেখে। এক্ষেত্রে স্কুলের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রতিটি স্কুলে শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন থাকে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেসব বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই শিশুদের পড়াশুনা ক্ষতিগ্রস্তের পাশপাশি সবচেয়ে ভাবনার বিষয় যে তারা মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই দীর্ঘ ছুটিতে শিশুশ্রম বাড়বে। মেয়ে শিশু ঝরে পড়বে। কারন অনেক অসচ্ছল পরিবার তাদের সন্তানদের কাজে যুক্ত করে দেবে। অন্যদিকে মেয়ে শিশুদের বিয়ে দেবে।

ভোলা জেলার লালমোহন থানার মধ্য রায়চাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত কুমার মৃধা বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে দেখা হলেই তারা বলে স্কুল খুলবেন কবে স্যার। তাদের মনে হয় বাড়িতে ভালো লাগে না। যেখানে শিশুদের নিয়েই আমাদের সময় কাটে। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দিকে তাদের পড়াশোনার ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে।’ দীর্ঘছুটির কারণে তাদের শিখনে দুর্বলতা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকপ্রাথমিক শিশুরা যা শিখেছে তা সব ভুলে যাবে। আর তাদেরকে স্কুলমুখি করতেও অনেক সমস্যা হবে। তার জন্য বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবে সর্বোপরী কথা হলো শিক্ষার মান অনেক পিছিয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক অভিভাবক সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সরকারের গাইডলাইন মেনে আমরা শিশুদেরকে টিভি মোবাইল এবং রেডিওতে পাঠ দেখার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।’

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারনে স্কুল বন্ধকালীন সময়ে গ্রামের শিশুরা প্রাকৃতিক পরিবেশ পেলেও শহরের শিশুরা একেবারেই গৃহবন্দি। রাজধানী উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষিকা কামরুন্নাহার বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা অনলাইনে যদিও ক্লাস নিচ্ছি কিন্তু মূল দায়িত্ব তাদের পরিবারের। অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে তার শিশুর পড়াশুনা আচরনের প্রতি। কারন এ সময় শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটে।’

এ প্রসঙ্গে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুরা সামাজিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে শিক্ষার্থীদের বড় প্রত্যাশার জায়গা থাকে খেলাধুলা ও বন্ধুমহল।’

তিনি বলেন, ‘অনেক শিশু প্রথমে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। কিন্তু যেতে যেতে এক সময় বিদ্যালয়ো তার বন্ধু তৈরি হয়। যাদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারে। যার ফলে বিদ্যালয় শিশুদের কাছে আনন্দের জায়গা হয়ে ওঠে। বিদ্যালয় থেকে সামাজিক আচরণেরও পরিচয় ঘটে।’

করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ছুটির কারণে এসব শিশুদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই গত ১৭ মার্চ থেকে সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকার কথা রয়েছে। এ কারণে এরই মধ্যে সব ধরনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমলে চলতি বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলারও ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার।

করোনা নভেল করোনাভাইরাস শিশু

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর