নতুন ঘর পেয়ে আত্মহারা ফুটপাতে শতবর্ষী কুলসুম
২৪ অক্টোবর ২০২০ ২২:৫৫
ঢাকা: কুলসুম বেগম (৯৮)। একে একে ১৩ সন্তানের মৃত্যু দেখেছেন। কিন্তু জীবনের কাছে এখনো পরাজিত হননি তিনি। একাই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর নিয়ে চেয়ে-চিন্তে না চলার মতো চলত তার দিন। ভিক্ষা করেও দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করা তার জন্য ছিল কঠিন। সহায়-সম্বলহীন এই বৃদ্ধার ঘুমানোর জন্য ঘর তো দূরের কথা, বিছানা ফেলার মতো একটুকরো জায়গাও ছিল না। সেগুনবাগিচার চিটাগাং হোটেলের পাশে একটি সরকারি অফিসের কোল ঘেঁষা রাস্তার পাশে নোংরা-আবর্জনা সরিয়ে দড়ি দিয়ে পলিথিন টাঙিয়ে কোনোমতে রাত পার করতে হতো। ঝড়-বৃষ্টির রাত কাটত নির্ঘুম।
শতবর্ষী কুলসুম বেগমের সেই কষ্টের দিনের অবসান হলো। ঝড়-বৃষ্টি বা রোদে আর খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হবে না তাকে। কারণ শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জুম বাংলাদেশ তার জন্য ব্যবস্থা করেছে ঘরের। শুধু তাই নয়, কুলসুম বেগমের ভরণপোষণের ব্যবস্থাও করেছে সংগঠনটি।
এই ঘর অবশ্য সাধারণ ঘর নয়, বলা যায় ‘পোর্টেবল’ বা ভ্রাম্যমাণ ঘর। অর্থাৎ এই ঘরটিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওযা যায়। তার জন্য ঘরের নিচে রয়েছে চাকা। এর ছাদে ও গেটে রয়েছে টবসহ ফুল গাছ।
সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত নতুন ঘরটিতে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রয়েছে জানালা, ভেন্টিলেশন সুবিধা। একপাশে রয়েছে তোষক। খাওয়ার সুবিধার জন্য রয়েছে একটি টেবিল, বসার জন্য টুল। প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য ঘরের মধ্যে রয়েছে দু’টি তাক। কাপড় রাখার হ্যাংগার ছাড়াও রয়েছে আয়না। রয়েছে লাইট-ফ্যানও। কুলসুম বেগমের জন্য বেশকিছু জিনিসপত্র আগে থেকেই এই ঘরে রাখা হয়েছে জুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। রয়েছে কিছু পোশাক। এমনকি ময়লা ফেলার একটি ঝুড়ি পর্যন্ত রয়েছে।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) জুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কুলসুম বেগমকে সেই ঘরটি উপহার দেওয়া হয়। অভিনেত্রী শমী কায়সার ও তার স্বামী রেজা আমিনের উপস্থিতিতে জুম বাংলাদশের প্রধান উপদষ্টো প্রকৌশলী খালেদ হুসাইনসহ জুম বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ঘরটি উপহার দেন কুলসুম বেগমকে।
ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা কুলসুম বেগম। খুশির ছাপ তার চোখে-মুখে। জীবনযুদ্ধে কষ্টের কথা বর্ণনা করে ১৩ জন সন্তানের জননী কুলসুম বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইলে খাই, না পাইলে না খাই। কেউ খিয়াল করে না যে বুড়া মানুষটা বাঁচল না মরল। কাইল কিছু জোগাইতে পারি নাই, তাই খাই নাই। রাত পার কইরা সহাল হইছে। জীবনের শেষ প্রান্তে আইসা ঘর পাইছি, কাপড়-চোপড় পাইছি, খাওয়ার ব্যবস্থা হইছে, তাই অনেক খুশি হইছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আপনাদের ভালো হোক।’
জুম বাংলাদেশ স্কুলের সভাপতি রুহুল আমিন সেলিম শনিবার বিকেলে সারাবাংলাকে বলেন, জুম বাংলাদেশ প্রথম থেকেই অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। মানবিক দিক বিবেচনাতেই মূলত তাকে এই ঘর করে দেওয়া। এছাড়া এই বয়স্ক মহিলার তিন বেলা খাবার, ওষুধসহ সম্পূর্ণ দায়িত্ব এখন থেকে জুম বাংলাদেশ বহন করবে। আমরা ভবিষ্যতে এরকম আরও পরিবর্তন করতে চাই। কিন্তু এর জন্য মানবিক মানুষদের আরও বেশি বেশি এগিয়ে আসতে হবে।’
জুম বাংলাদেশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এসটি শাহীন বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি মাত্র। বয়োবৃদ্ধ এই মানুষটি যেন জীবনের শেষ ক’টি দিন একটু ভালো থাকতে পারেন, তার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। ঘরটি ভ্রাম্যমাণ, বিভিন্ন জায়গায় সুবিধামতো মুভ করা যাবে। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে তার কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, জুম বাংলাদেশ এ রকম হাজারও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা। সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে যেকোনো বড় কাজ সহজে সমাধান করা যায়। কিন্তু ওই একই কাজ হাতেগোনা কয়েকজনকে দিয়ে করতে গেলে কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা আশা করব, আগামীতে সমমনা এরকম বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জুম বাংলাদেশের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে।