আশুলিয়ায় ‘গরিবের ক্যাসিনো’, প্রতিরাতে লেনদেন ১০-১৫ লাখ টাকা
২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৪৩
ঢাকা: দেশজুড়ে আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যাসিনো নিয়ে তেমন শোরগোল নেই। তবে এবারে রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়াতে সন্ধান মিলেছে এক ‘মিনি ক্যাসিনো’র। ‘গরিবের ক্যাসিনো’ নামে পরিচিত এই জুয়ার আড্ডাখানার সন্ধান পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে ২১ জনকে।
অভিযানের পর র্যাব জানিয়েছে, এই ক্যাসিনোতে প্রতিরাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো। আর এই জুয়ার আসরে নিয়মিত যাতায়াত ছিল যাদের, তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। জুয়ার আসক্তিতে যাদের অনেকেই হারিয়েছেন সহায়-সম্বল।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন কাইচাবাড়ি এলাকায় সেই ‘মিনি ক্যাসিনো’তে অভিযান চালায় র্যাব-৪-এর একটি দল। জুয়ার আসর থেকে মাদকসহ তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-৪ এর একটি দল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিছুর রহমানের উপস্থিতিতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাজেদুল ইসলাম সজল এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
রোববার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে মিরপুর পাইকপাড়ায় র্যাব-৪-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত দেড় বছর ধরে চলছিল এই মিনি ক্যাসিনো। প্রতিরাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো। এ ক্যাসিনোতে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত খেলতেন। রাত যত গভীর হতো, ক্যাসিনো তত জমে উঠত।
অভিযানে গ্রেফতার ২১ জন হলেন— মো. বিল্লাল (৩৮), মো. জুয়েল (২৮), মইদুল ইসলাম (৩২), সবুজ মিয়া (২৮), মো. শরিফ (২৮), মো. লিটন (৪৫), রবিউল মোল্ল্যা (২৪), আবু তালেব (২০), দিয়াজুল ইসলাম (২০), মো. শিপন (২০), আব্দুল আলিম (৩৫), আজাদুল ইসলাম (৫০), সোহেল মোল্ল্যা (৩২), আসাদুল ইসলাম (৩০), মো. এখলাছ (৩৫), মঈন মিয়া (২৮), মাসুদ রানা (২০), হাবিবুর রহমান (৪৭), রুবেল মিয়া (৩৩), ফজলে রাব্বি (২২) ও রনি ভূঁইয়া (২৫)।
অভিযানে মিনি ক্যাসিনো জুয়ার আসর থেকে প্লেয়িং কার্ডসহ একটি ক্যাসিনো বোর্ড, ১০০ পিস ইয়াবা, ১২ ক্যান বিদেশি বিয়ার, ২২টি মোবাইল এবং নগদ ৩৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, এই ক্যাসিনো ব্যবসার মালিকানায় রয়েছেন প্লাবন হোসাইন ও ওমর ফারুক নামে দু’জন। তাদের এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে এই মিনি ক্যাসিনো সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা জানতে পারব।
দেড় বছর ধরে এই মিনি ক্যাসিনো কাদের ছত্রছায়ায় চলত— এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, এটা বলা খুব মুশকিল। কারণ বাইরে প্রদর্শন করা হয় ক্যারাম বোর্ড, আর এর আড়ালে চলে এরকম জুয়ার আসর কিংবা মিনি ক্যাসিনো। আমরা যখনই গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তখনই অভিযান করে মিনি ক্যাসিনো থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার করেছি।
ক্যাসিনোর বোর্ড সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, এই বোর্ড আমদানি করা হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে। তবে দেখে মনে হয়েছে সম্প্রতি আমদানি করা হয়নি। আপনারা জানেন, অনেক বড় বড় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব। সমাজের খুব বড় বড় তথাকথিত গ্যাংস্টারদের আটক করা হয়েছে। তারা কে কীভাবে এই ক্যাসিনো বোর্ড আমদানি করেছে, সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। অবৈধভাবে যারাই এই বোর্ড আমদানি করুক না কেন, খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্যাসিনো ক্যাসিনো বোর্ড গরিবের ক্যাসিনো জুয়ার আসর বিদেশি বোর্ড মিনি ক্যাসিনো র্যাব-৪ র্যাবের অভিযান