Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭ বছর পর রায়গঞ্জে আ.লীগের সম্মেলন, স্বচ্ছ নেতৃত্ব চায় তৃণমূল


২৬ অক্টোবর ২০২০ ১১:৪২

সিরাজগঞ্জ: দীর্ঘ ৭ বছর পর রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। আগামী ২৯ অক্টোবর রায়গঞ্জ উপজেলার সম্মেলনকে ঘিরে মহাসড়ক-আঞ্চলিক সড়কে টানানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। তাতে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জাতীয় চার নেতার ছবি। এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

তবে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা দলের সিনিয়র নেতাদের। সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উপজেলার নিমগাছী ডিগ্রি কলেজ মাঠে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় রাজপথ দখলসহ রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে দলটি। তবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে দলে। তবে তাদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে সেই নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম টিপু।

সম্মেলনে কে হচ্ছেন সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক- এ প্রশ্নকে ঘিরেই সবার আগ্রহ আগামী ২৯ অক্টোবরের দিকে। রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেইবার সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল হাদি আল-মাজী জিন্নাহ ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শরিফ উল আলম শরিফ।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সম্মেলনের ঘোষণার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও কাউন্সিলদের চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা। অথচ তালিকায় নেই দলের নিবেদিত ও ত্যাগী নেতারা।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গাজী এসএম আজিমুদ্দিন ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। এমনকি একই বাড়ি থেকে ৫-৬ জনকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে।’

একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩ বারের সিনিয়ির সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের লোকজনসহ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাউন্সিলর বানানো হলেও আমাকে বাদ করা হয়েছে।’ তার মতো অনেককেই কাউন্সিলর বানানো হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তবে সভাপতি আব্দুল হাদী আল-মাজী-জিন্নাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এক বাড়িতে ৫-১০ জন যোগ্য লোক থাকলে তারা কাউন্সিলর হতেই পারেন। এটি দোষের কিছু না।’

এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন করে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা নির্বাচিত হতে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাত-দিন কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবে, সভাপতি পদের জন্য নেতাকর্মীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের সাবেক এমপি মরহুম গাজী ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন।

একই পদের অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাদী আল মাজী জিন্নাহ। তিনি জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং ব্যবসায়ি হওয়ায় বিগত ৮ বছরে দলীয় কার্যক্রমে ও নেতাকর্মীদের জন্য প্রত্যাশিত সময় দিতে পারেননি। এ কারণে তৃণমূলের কাছে তিনি ঘেঁষতে পারছেন না বলে জানান অনেকেই।

এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন নেতৃত্ব আসা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এ পদেও যোগ্য এবং ত্যাগী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা সম্প্রীতি মঞ্চের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয়।

দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় এই উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিলো। জাতীয় দিবস, বিশেষ দিবস, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও পালন করা হয়েছে দায়সারা ভাবে। এছাড়া দীর্ঘদিন মূল দলের সম্মেলন না হওয়ায় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। তবে, এসব কারণে দলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা না দিলেও এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন ব্যানার রায়গঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর