Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ


১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৯:২৭

জোসনা জামান, করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বার বার হোঁচট খাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণ চুক্তি। দীর্ঘ দিন ধরে চিঠি চালাচালি এবং জটিলতার অবসান হওয়ায় গত মাসে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা দেয় দীর্ঘসূত্রতা। তার পরও চলতি মাসে এ ঋণ চুক্তি সম্ভব হবে বলে দাবি করেছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ মাসে চুক্তি হচ্ছে না। এমনকি কবে নাগাদ চুক্তি হবে সেটিও জানাতে পারছেন না ইআরডির কর্মকর্তারা। ফলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগের কাজ আরও পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় রেলপথের নতুন রুট তৈরি হবে। নতুন রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথ দিয়ে খুলনায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা।

চুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির চীন ডেস্কের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপ-সচিব একেএম মতিউর রহমান রোববার সারাবাংলাকে বলেন, চলতি অর্থবছর যে ৮টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা চীনকে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে এ প্রকল্পটিও রয়েছে। সম্প্রতি চীনের এক্সিম ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ প্রকল্পের জন্য ঋণও অনুমোদন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন সমস্যা নেই। তবে চীনের পক্ষ থেকে এখনো চুক্তি স্বাক্ষরের কোন তারিখ পাওয়া যায়নি। আশা করেছিলাম ডিসেম্বরের মধ্যেই চুক্তি করতে পারব। কিন্তু সেটি বোধহয় আর সম্ভব হচ্ছে না।
অপর দিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি না হওয়ায় প্রকল্পের মূল কাজ আটকে আছে। তবে সরকারি অর্থায়নেরও কিছু কাজ চলছে। তিনি বলেন, চুক্তিটি দ্রুত হলেই ভাল হয়।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং বাকি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ই এ প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তীতে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্বিত হতে থাকে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের হস্তক্ষেপে সুদ ও শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যায়। আগের ২ শতাংশ সুদেই ঋণ দিতে রাজি হয় চীন।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং ও ৩ কিলোমিটার ডবলসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, এক দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র‌্যাম্বপস, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস,২৯টি লেভেল ক্রসিং, ৪০টি আন্ডারপাস, ১৪টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ কম্পিউটার বেজ রেলওয়ে ইন্টারলক সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ।

ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, এ প্রকল্পের ফিন্যান্সিং এগ্রিমেন্টের বাণিজ্যিক চুক্তি মূল্যের ৮৫ শতাংশ প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সম্পন্ন হবে এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যা পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংককে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়।

প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়, বাণিজ্যিক মূল্যের ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে চীনা এস্টেট কাউন্সিলের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে অর্থায়ন প্রক্রিয়া করতে ৩-৬ মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সুদের হার আড়াই শতাংশ হবে। কেননা পিবিসি কোটা সংগ্রহের জন্য চীন সরকারকে ওপেন মার্কেট থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু চীনের এ দুটি বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। পরবর্তীতে আলাপ-আলোচনার পর আগের নিয়ম অনুযায়ী ২ শতাংশ সুদ এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়ন এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চলতি বছর (২০১৭ সালে) প্রকল্পটিতে অর্থায়নের অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর বাংলাদেশের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে চীনা এক্সিম ব্যাংক।

সারাবাংলা/জেজে/এসআই

পদ্মাসেতু

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর