ফ্রান্সকে বয়কট ও পণ্য বর্জনের ডাক ইসলামী আন্দোলনের
২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৯:২৩
ঢাকা: হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করায় ফ্রান্সকে বয়কট এবং ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘ফ্রান্স সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে পুলিশ পাহারায় মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে মুসলিম উম্মাহ’র কলিজায় আঘাত করেছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যাখোঁ ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। অবিলম্বে ব্যঙ্গচিত্র প্রত্যাহার করে মুসলমানদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্যাথায় বিশ্ব মুসলিম নেতাদের ঘোষণা অনুযায়ী ফ্রান্সকে বয়কট এবং ফ্রান্সের পণ্য বর্জন কর্মসূচির সঙ্গে বাংলাদেশকেও একাত্মতা ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।’
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকাস্থ ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির এ ডাক দেন।
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘বিশ্বের অশান্তি দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় সংস্থাটি ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ ও ওআইসিকে ফ্র্যান্সের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে সংসদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব জ্ঞাপন করতে হবে। মুসলমানদের পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হলে দেশবাসী সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত জমায়েতে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, জিএম রুহুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমসহ অন্যরা।
কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ূম ও সহপ্রচার সম্পাদক মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাকীর পরিচালনায় জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, সকাল ১০টায় ঘেরাও পূর্ব জমায়েত হওয়ার কথা থাকলেও এর অনেক আগেই বায়তুল মোকাররম এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। দুপুর ১২টা নাগাদ ফ্রান্স দূতাবাস অভিমুখে ইসলামী আন্দোলনের মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে পল্টন মোড়, বিজয়নগর, কাকরাইল হোটেল নাইটিংগেল হয়ে শান্তিনগর পৌঁছালে পুলিশ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলের গতি রোধ করে।
পরে সেখান থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন মুফতি রেজাউল করীম। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— আগামী ২৯ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ৩০ অক্টোবর সারাদেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে ইমাম ও খতিবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল এবং ১৩ নভেম্বর ধোলাইপাড়ে সমাবেশ। এছাড়া সারাদেশের ইমাম ও খতিবদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ পালনের আহ্বান জানান সৈয়দ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, মুসলমানরা মুহাম্মদ (সা.)-কে তাদের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। মহানবীর অপমান মুসলমানরা সহ্য করবে না। ফ্রান্স সরকার নবীর বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের মাধ্যমে তাদের হিংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ করেছে। ফ্রান্স সরকার নবীর বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বমুসলিমকে উসকে দিয়ে বিশ্বব্যাপী অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশ্বমুসলিম নেতৃত্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। ফ্রান্স সরকারকে অবিলম্বে এ ধৃষ্টতাপূর্ণ ব্যঙ্গচিত্র প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে প্রতিবাদের দাবানল ছড়িয়ে পরবে এবং নবীপ্রেমিকরা ফ্রান্সের সব পণ্য বর্জন করতে বাধ্য হবে। বাকস্বাধীনতার নামে ফ্রান্স ইসলাম বিরোধী চরম অসভ্য ও নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীও এর আগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। এসব উগ্র কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, ফ্রান্স সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বিশ্বের মুসলমানদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোনো ধর্মের ওপর আঘাত করার কোনো ইতিহাস মুসলমানদের নেই। বার বার অমুসলিমরাই ইসলাম ধর্মের ওপর আঘাত করে আসছে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে। কাজেই বাকস্বাধীনতার নামে প্রাণপ্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কোনো ধরনের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বরদাশত করা হবে না।’
ইমানুয়েল ম্যাখোাঁ ইসলামী আন্দোলন কঠোর আন্দোলন দূতাবাস ঘেরাও ফরাসি পণ্য বর্জন ফ্রান্স বয়কট ফ্রান্স