নিজেদের ব্যাংক ঋণেই যেন উন্নয়ন কাজ করতে পারি, সে ব্যবস্থা নিয়েছি
২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৮:২৮
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের নিজেদের অনেক উন্নয়নের কাজ আমরা যেন অন্যের কাছ থেকে ধার না এনে নিজেদের অর্থায়নে নিজেদের ব্যাংকে লোন নিয়েই করাতে পারি, তারও একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এব্যাপারে বিস্তারিত আপনারা জানতে পারবেন।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভাণ্ডারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস্ (বিএবি) কর্তৃক প্রদত্ত কম্বল গ্রহণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কবরী হলে যুক্ত হন।
করোনাভাইরাস দুর্যোগের সময় থেকে বিভিন্ন দুর্যোগে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এগিয়ে আসার ভূমিকার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এবার শীতকাল শুরু হতে যাচ্ছে। আর এবার যেভাবে যত বৃষ্টি হয়েছে এবং যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাতে শীতের সময়ও বোধহয় শীতের প্রকোপটাও বেশি হতে পারে। শীত শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকস’র পর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছেন, আপনারা শীতবস্ত্র দেবেন, যেটা আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবো, যেটা সাধারণ মানুষের উপকার হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি যে, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনীতি যথেষ্ট স্থবির। এটা শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বব্যাপী। তবে আমরা এইটুকু বলতে পারি, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করি। যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলা করবার মতো বাংলাদেশের মানুষের সেই মনোবল আছে, সাহস আছে। সেই সাহসিকতা নিয়েই এদেশের মানুষ চলে।’
এক্ষেত্রে করোনাভাইরাস থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি সেই উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে প্রণোদনাগুলি দিয়েছি তাতে সকলেই অন্তত ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার মতো তারা সহযোগিতাটা পেয়েছেন। বাংলাদেশ বোধ হয় বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে শুরু থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখা, ব্যবসা বাণিজ্য যাতে সকলে ভালোভাবে চালাতে পারে তার ব্যবস্থা করা এবং সাধারণ মানুষকে সরাসরি অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে শুরু করে আমরা নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এর ফলে করোনাভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাবটা যতটা খারাপ অবস্থা আমাদের অর্থনীতিতে পড়তে পারত, সেটি পড়তে পারেনি। আমরা সেটি মোকাবেলা করে যাচ্ছি এবং আজকে যদিও আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল ২০২০ সাল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেয়ে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যখন উদযাপন করব, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেন আরও শক্তিশালী হবে আরও মজবুত হবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, দারিদ্র্য বিমোচন হবে, দেশের মানুষ আরও উন্নত জীবন পাবে, কিন্তু আমরা হয়ত যেটা আমাদের লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব, সেটি করতে পারিনি, তারপরও এটি আমরা ৫ ভাগের ওপর রাখতে সক্ষম হয়েছি। সেটা অনেক উন্নত দেশও পারেনি কিন্তু যেটা আমরা বাংলাদেশ পেরেছি। পারার কারণটা হচ্ছে এই আমরা সময়মতো কতগুলো বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি।’
‘করোনার সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো মোকাবিলা করেও আজকে আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। কারণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ মানুষের পেটে খেলে পিঠে সয়, বাংলাদেশে একটা কথাই আছে। আমরা সেটিই মেনে চলছি। এদেশের মানুষের জন্য অন্তত পেটের খাবারের অভাবটা যেন না হয়’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমাদের অর্থনীতির মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে আমাদের গ্রামের অর্থনীতি। আমরা গ্রামের অর্থনীতি যেন ভাল থাকে, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি বলে জানান তিনি।
‘বাংলাদেশ কিন্তু এতটা প্রাইভেট ব্যাংক ছিল না। আমি যখন সরকারে আসি তখন থেকেই প্রাইভেট ব্যাংকগুলো দেওয়ার জন্য আমরা পদক্ষেপ নেই। অনেক বাধা-বিঘ্ন ছিল। অনেকেরই আপত্তি ছিল। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা আপত্তি জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে আবার এত ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বরং ব্যাংকের শাখাগুলো যেগুলো লাভজনক হবে, যেগুলো বন্ধ হয়ে যায় সে ধরনের পরামর্শও ছিল। কিন্তু আমরা সেটি শুনিনি। কারণ দেশটা আমাদের। আমরা জানি কীভাবে এদেশের উন্নতিটা করতে হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে সবসময় সচেতন। সে কারণে আমি প্রাইভেট ব্যাংক দিয়েছি লেই আমার সবচেয়ে বড় লাভ হচ্ছে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অবহিত করেন তিনি।
মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় যদি কেউ গৃহহীন থাকে ভূমিহীন থাকে আপনারাও তাদেরকে কিন্তু ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে পারেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দিচ্ছি। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও দিচ্ছে। আপনারাও সেখানে একটু সহযোগিতা করতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামের অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করা। যারাই ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, আপনি কত আর বিদেশে রফতানি করবেন। আপনার দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা, তাহলে আপনার উৎপাদিত পণ্যের বাজারটা আপনার দেশেই হবে।’
ব্যাংক ব্যবহারে দেশের মানুষ যেন অভ্যস্ত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ। করোনা এখন আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণের আনলেও আপনারা দেখছেন ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। এরইমধ্যে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সবাইকে আহ্বান করছি, আপনারা একটু সচেতন হন, যাতে করে সকলে নিজেকে সুরক্ষা করুন, অন্যকে সুরক্ষিত করুন। কাজেই সেভাবে যাতে আমরা করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে পারি, রক্ষা করতে পারি, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি শুরু থেকে।’
‘এর পূর্বে যখন শুরু হলো, এই বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। হঠাৎ করে একটা ধাক্কা আসল। তারপরও আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনো আমাদের সচেতন হতে হবে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতির ওপর যেন কোনোরকম প্রভাব না পড়ে। মানুষের জীবনযাত্রা যেন ঠিক থাকে। আর অর্থনীতির চাকাটা যেন সচল থাকে, সেটাই আমরা চাই।’
১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির দিক তুলে ধরেন এবং প্রণোদনা প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সাথে আমাদের রিজার্ভ কিন্তু এখন ৪০ বিলিয়ন। আমাদের টার্গেট হচ্ছে আমরা ৫০ বিলিয়নে পৌঁছাতে চাই। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব, আমাদের অন্তত ৫০ বিলিয়ন যেন হয়। সেই সাথে আমাদের নিজেদের অনেক উন্নয়নের কাজ যেন আমরা অন্যের কাছ থেকে ধার না এনে নিজেদের অর্থায়নে যেন করতে পারি বা আমরা আমাদের ব্যাংক থেকে লোন দিয়েই কাজ করাতে পারি, যাতে বাইরে যেতে না হয়। অন্তত কিছুভাগ আমরা নিজেরা করব, তারও একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এব্যাপারে বিস্তারিত আপনারা জানতে পারবেন। আমি সিদ্ধান্ত দিয়ে এইটার এখন একটা প্রস্তুতি চলছে। অর্থাৎ আমি এটা সব সময় চাই যে, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, স্বাবলম্বী হবে। কারো কাছে ধার পেতে না, কারো কাছে ধার করে না, কারো কাছে হাত পেতে না, আমরা মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে বিশ্বে সম্মান নিয়ে চলবো। যেটা জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, সেই স্বাধীনতার সুফল যাতে বাংলার মানুষের ঘরে পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেইভাবে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেইভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
‘আমি সব সময় মনে করি যে, একটা দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের যেমন দায়িত্ব কাজ করবে সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারিখাতটা কিন্তু সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে জন্য আপনারা দেখেছেন, আমি সরকারে আসার পর থেকেই বেসরকারি খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি। সব ধরনের কাজ করার ব্যাপক সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। কাজেই আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেটিই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অবশ্য এতো কথা বলার কথা না, তারপরও যখন একটু সুযোগ পেলাম বললাম, আপনারা সব সময় কোনো দুর্যোগে পাশে দাঁড়ান। তবু আবারও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।’