পিটিয়ে হত্যার পর লাশে আগুন, বুড়িমারীতে ১৪৪ ধারা জারি
৩০ অক্টোবর ২০২০ ০২:০২
ঢাকা: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পরে তার মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহত যুবক মসজিদে ঢুকে কোরআন শরিফ অবমাননা করেছিলেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই যুবকের সঙ্গে আরও একজন উপস্থিত ছিলেন। তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নিহতের নাম-পরিচয় সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে আসর নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রবিউল ইসলাম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এলাকায় গুজব ছড়িয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পোড়ানো হয়েছে। ওই যুবকের সঙ্গের আরেকজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয়ের বিস্তারিত এখনো আমরা জানি না। ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ সুপার এসেছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিলর হাফিজুল ইসলাম মোবাইলে সারাবাংলাকে বলেন, মসজিদের পাশেই বাজার ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ। একজন লোক আসরের নামাজের কিছুক্ষণ পর এসে জানালেন, দু’জন লোক মসজিদে অস্ত্র খুঁজতে গিয়ে কী নাকি করেছে। এ অভিযোগে লোকজন তাদের মারধর করেছে। পরে তাদের উদ্ধার করে পরিষদে নিয়ে আসা হয়।
হাফিজুল বলেন, ওই দুই জনকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে এসে চেয়ারম্যানকে ফোন করে জানানো হয়, পুলিশকেও জানানো হয়। পুলিশ আসার আগেই হাজার হাজার লোকজন জড়ো হয়ে যায়। দরজা-জানালা ভেঙে তারা একজনকে নিয়ে যায়। তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং পুড়িয়ে দেয়। আরেকজনকে পুলিশের পোশাক পরিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুড়িমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিন্টু হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, পুরো এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা এসেছে। ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। মুসল্লিরা জানিয়েছেন, ওই দুই জনও নামাজ পড়েছেন। তারপর মুসল্লিদের বলেছেন, আগামীকাল কর্মসূচি দিয়েছেন, বোমা টোমা আছে নাকি? পরে মসজিদের তাক থেকে কোরআন নামিয়ে মেঝেতে রেখে দাঁড়িয়ে কী যেন খুঁজতে শুরু করেন। এরপরই চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মারধর করা হয়। পরে তাদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়।
মিন্টু হোসেন আরও বলেন, ঘটনাস্থলের পাশেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুনন্নাহার ও উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল সোলার বিতরণের কাজে ছিলেন। ঘটনা শুনে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে ছুটে আসেন। কিন্তু ওই সময় কয়েক হাজার মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ ঘিরে ধরে। তারা পরিষদের কক্ষ ভেঙে একজনকে নিয়ে যায়। এসময় ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানও লাঞ্ছিত হন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী। তার বাড়ি রংপুর শালবন এলাকায়। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক ও গ্রন্থাগার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। তবে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। সারাবাংলাও স্বতন্ত্রভাবে এসব তথ্য যাচাই করতে পারেনি।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
১৪৪ ধারা জারির তথ্য জানিয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা সারাবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একজনকে মেরে পুড়িয়ে ফেলেছে স্থানীয়রা। আরেকজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। ঘটনা সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কোরাআন অবমাননা পিটিয়ে হত্যা পুড়িয়ে হত্যা লালমনিরহাট লাশে আগুন