বেহাল সড়ক, ১০ মাসে সংস্কার মাত্র ৩০ শতাংশ!
৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৩২
মৌলভীবাজার: জেলা সদর থেকে শমশেরনগর হয়ে চাতলাপুর চেকপোস্টে যাওয়ার সড়কটি গত ৪ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের পিচ উঠে গিয়ে এখানে-সেখানে তৈরি হয়েছে গর্ত, খানাখন্দ। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এই সড়কে যাতায়াতকারীদের রীতিতো চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, এই বেহাল দশার কারণে গত বছরের নভেম্বর থেকে ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে বড় ধরনের সংস্কার কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও এতদিনে কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। সংস্কার কাজ চলার সময় বৃষ্টিপাতে সড়কে নতুন কর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন এবং ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরের মনু স্থল শুল্ক স্টেশনের মধ্য দিয়ে দুই দেশে বিভিন্ন ধরণের পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। আর সে জন ব্যবহার করা হয় এই সড়কটি। জেলা সদরের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর— তিন উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক লোকের যাতায়াত রয়েছে এ পথে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের ৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয় এক বছর আগে। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কের বেশিরভাগ অংশেই সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সড়কের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর বাকি কাজ হচ্ছে খুবই ধীর গতিতে। এর মধ্যে বৃষ্টিপাত ও যানবাহনের চাপে সড়কের বালু, পাথর ছিটকে পড়ে সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। ফলে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের সারাক্ষণ তীব্র ঝাঁকুনির মধ্যে থাকতে হয়।
নির্ধারিত সময়ে সংস্কার কাজ শেষ না করায় ঠিকাদারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা বলছেন, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে এই সড়কে যাতায়াত করাটা প্রায় অসম্ভব। ফলে অনেকেই বাধ্যমে হয়ে বাড়তি ২০ কিলোমিটার ঘুরে শ্রীমঙ্গল শহর হয়ে মৌলভীবাজারে আসা যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সিএনজি অটোরিকশাচালক ইউসুফ মিয়া, বাতেন মিয়া, রাকিব মিয়া সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করে বলেন, এই সড়কে গাড়ি চালানোটা কঠিন। যাত্রী তো সিটে বসেই থাকতে পারে না। আমাদের গাড়ির বিভিন্ন পার্টসও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে দুই-তিন মাস পর গাড়ি সার্ভিসিং করা লাগত। এখন প্রতিসপ্তাহেই গ্যারেজে লাইন দিতে হয়। এখন খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশি হয়ে পড়ছে— বলেন সিএনজি অটোরিকশাচালকেরা।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সড়ক সংস্কারের কাজটি পায় কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেব আরসি প্রাইভেট কোম্পানি। তবে এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন কুলাউড়ার এম আর ট্রেডিংয়ের মুহিবুর রহমান। কিন্তু সেই কাজ শুরু করার পর আর তেমন একটা এগোয়নি।
জানতে চাইলে এম আর ট্রেডিংয়ের ঠিকাদার মুহিবুর রহমান (কোকিল) সারাবাংলাকে বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমরা ফের সময় চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সময় বাড়িয়ে দেয়নি। তবে জনস্বার্থে আমরা সড়ক উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে টানা বৃষ্টির জন্য কাজ শেষ করা যায়নি। ২০ কিলেমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ ফের শুরু হয়েছে। ঠিকাদারের পক্ষ থেকে কাজের সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সারাবাংলাকে বলেন, আমি নিজে সড়ক পরিদর্শন করেছি। দ্রুত যেন সড়কটি সংস্কারের কাজ শেষ হয়, সে জন্য সওজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। খুব দ্রুতই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
সম্প্রতি এ সড়কটির সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. এম এ শহীদ। তিনি নিজেও যাত্রী ও যানবাহন চালকদের দুর্ভোগের চিত্র দেখেছেন। সংসদ সদস্য বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।