বরাদ্দের সবই ‘লুটেপুটে’ খান রংপুর পিটিআই সুপার
৩০ অক্টোবর ২০২০ ১১:১০
বগুড়া: প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সুপারের চেয়ারে বসে তিনি মনগড়া সব ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করেন। আর উপপরিচালকের চেয়ারে বসে আবার তিনিই সেইসব ভুয়া বিল ভাউচারের অনুমোদন দেন। এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে তিনি সরকারি অর্থ লুট করেননি। শিক্ষক বদলিতেও বদলি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে বদলি করেন।
যে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ তিনি হলেন রংপুর পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপপরিচালক পদে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের যে বরাদ্দ আসে, তার পুরোটাই নিজের মতো করে ‘লুটেপুটে’ খান।
জানা যায়, এবছর আইসিটি ট্রেনিংয়ের জন্য প্রায় ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ব্যাগ বাবদ ৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২০০ টাকার নিম্নমানের ব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য প্রতিদিন খাবার ভাতা ৪৮০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সকালে আর বিকালে এক প্যাকেট বিস্কুট আর চা। দুপুরে মাছ, মোটা চালের ভাত দিয়ে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করছেন সুপার।
আরও পড়ুন- সুপার সেজে বানান ভুয়া বিল, উপপরিচালক হয়ে দেন অনুমোদন
এমনকি গত বছরের রোজার মধ্যে যাদের আইসিটি ট্রেনিং হয়েছে তাদের হোটেল থেকে দুপুর বেলায় ১৫০ টাকার একটা খাবার প্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে।। শিক্ষকরা ট্রেনিং শেষে সন্ধ্যায় ওসব খাবার ফেলে দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরদের তার কম দামের বাজে ব্যাগ বেশি দামে নিতে বাধ্য করেন।
এর আগে, অধিদফতরের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখার ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালের ৫৫৮নং স্মারকে তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখার এডি আবুল কাশেম মিয়া নিজে তদন্ত করার জন্য তার নিজের নামে চিঠি করেন। ২২/৯/২০১৮ তারিখে সকাল ১০টায় পিটিআই তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর পিটিআইয়ের ২০১৮ সালের দুই শিফটের প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষে আব্দুর রাজ্জাকসহ ৪ জন অভিযোগ করেন।
অভিযোগের মধ্যে ছিল ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, গালিগালাজ করা, ঢাকা থেকে ইউনিফরম কাপড় কিনে জোর করে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে বিক্রি করা। প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগে তাকে ‘সুকৌশলী চাদাঁবাজ’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন।
এছাড়া ডিডি অফিসের গাড়ি সরকারি কাজে যতটুকু ব্যবহার হয়, তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সুপারের ব্যক্তিগত কাজে। মাঝেমধ্যেই তিনি পাবনার সুজানগরে ডিডি অফিসের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৪ জুলাই পিটিআইয়ের গাড়ি নিয়ে খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সুজানগর যান। আবার গত ৮ আগস্ট পিটিআইয়ের গাড়ি পাবনা পাঠিয়ে তাকে রংপুরে আনা হয়। দ্বৈত দায়িত্বে থাকায় পিটিআই ও ডিডি অফিসের দু’টি গাড়ির জ্বালানি বাবদ দ্বিগুণ বিল করেন বলে চালকদের কাছ থেকে জানা গেছে। দু’বারই চালক হিসেবে ছিলেন জয়নাল আবেদীন। চালক জয়নালকে ফোন করে জানতে চাইলে এসব বিষয় স্বীকার করেছেন।
চালকরা জানিয়েছে, গাড়ির মিটার নষ্ট করে ভুয়া লগবই মেইনটেইন করে সুপার বছরে পিটিআইয়ে তেলের বরাদ্দ ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আর ডিডি অফিসের তেলের বরাদ্দ আড়াই লাখ টাকার ভুয়া জ্বালানি বিল তুলে আত্মসাৎ করেন। অথচ একজন কর্মকর্তা দুই জায়গাতে গাড়ির তেলের বিল তুলতে পারেন না।
সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে রংপুর পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। একজন সহকারী পরিচালক রংপুর বিভাগের অফিসগুলোতে অবৈধ কাজের সুবিধা করতে না পেরে আমার পেছনে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তদন্ত করলে জানতে পারবেন কে অভিযুক্ত আর কে অভিযুক্ত নন।’
অনিয়ম অভিযোগ খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভুয়া ভাউচার রংপুর পিটিআই লুটপাট