দীপন হত্যার ৫ বছর, চলতি বছরেই রায়ের আশা
৩১ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৭
ঢাকা: ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ব্লগার ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এইদিনেও তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও আজও মামলার বিচারকার্য শেষ হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রত্যাশা করছে, চলতি বছরের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান (জাকির) সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটির বিচারের প্রায় শেষপর্যায়ে চলে এসেছে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত। মামলাতে ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন আদালত। আর কয়েকজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন। এরপর যুক্তিতর্কে শেষ হলেও রায় ঘোষণা করবেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে। সকল আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার (মৃত্যুদণ্ড) আশা করছি।’
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই মামলায় আমি নতুন করে আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ পেয়েছি। মাত্র একদিন সাক্ষীদের জেরা করেছি। মামলাতে আসামিদের দেওয়া ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের- ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে বিচারকার্য চলছে। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্টপক্ষ থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।’
মামলা সম্পর্কে নিহত দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘গত পাঁচ বছর হয়ে গেল আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তবে বিচারের তেমন অগ্রগতি হয়নি। সরকারেরই তো মামলাটি বিচার করার কথা। সরকার বিচারও করছে। তবে করোনার কারণে বিচার বন্ধ ছিল। আবার বিচার শুরু হয়েছে। বিচার যখন আরম্ভ হয়েছে শেষ করে ফেলা ভালো। মামলাটির রায় দ্রুত হলে ভালো হয়। মামলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।’
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৯ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের শেষ হয়েছে।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর দীপন হত্যা মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ আট জঙ্গির বিচার শুরুর আদেশ দেন।
চার্জশিটভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে স্বাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ। আসামিদের মধ্যে জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন পলাতক।
গত ১৯ মার্চ আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট উপস্থাপন করা হয়। একই বছরের ১৫ নভেম্বর আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুর রহমান চার্জশিট দাখিল করেছিলেন।
চার্জশিটে বলা হয়, দীপনকে হত্যার নির্দেশদাতা, মূল পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ছিলেন পলাতক সৈয়দ জিয়াউল হক। আসামি খাইরুল, আবদুস সবুর ও মইনুলকে হত্যা মিশনে যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। হত্যার আগে দীপনের সমস্ত খবরা-খবর তারা নলেজে রাখতো।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দুপুরের পর রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দীপনকে। একইদিন লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে ওই প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক সুদীপ কুমার ওরফে রণদীপম বসু ও প্রকৌশলী আবদুর রহমানকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।