তুরস্ক-গ্রিসের ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১৯
৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৩২
এজিয়ান সাগরের উপকূলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও গ্রিসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে ভূমিকম্পে দুই দেশে ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। কেবল তুরস্কেই আরও সাত শতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার খবর মিলেছে। পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ভবন ভেঙে পড়েছে প্রায় ২০টি। ভূমিকম্পের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসও আঘাত হেনেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) তুরস্কের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট) ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির শক্তিমত্তা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রা, যদিও তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এএফএডি) বলেছে, এটি ছিল ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে তুরস্কের উপকূলীয় ইজমির প্রদেশের ইজমির শহরে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এসময় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এএফএডি বলছে, কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছে দেশটিতে। আহত হয়েছে আরও ৭০৯ জন। অন্যদিকে গ্রিসের সামোস দ্বীপে এই ভূমিকম্পের আঘাতে দুই কিশোর-কিশোরীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
এএফএডি বলছে, তুরস্কের ইজমির শহরে ১৭টি ভবন পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বসে পড়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চলছে। দেশটির নগরায়ন বিষয়ক মন্ত্রী মুরাত কুরাম জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে তাঁবু খাটানো হয়েছে, যেখানে দুই হাজার মানুষ থাকতে পারবেন।
ভূমিকম্পের সময় ইজমির শহরের গুজেলবাহচে এলাকায় ছিলেন পিএইচডি শিক্ষার্থী ইল্কে সিদে। তিনি ভূমিকম্পের সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। ফলে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সময় তেমন একটা পাত্তা দেইনি। কিন্তু পরে দেখলাম, এটি একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প। ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল এটি।
বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। রাজধানী ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ইজমিত শহরে ১৯৯৯ সালের আগস্টে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। ওই সময় ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। এছাড়া ২০১১ সালে পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভানে প্রায় পাঁচশ মানুষ মারা যায় ভূমিকম্পের আঘাতে।
ভূমিকম্পের আঘাতের পর জলোচ্ছ্বাসও দেখা দিয়েছে উপকূলীয় এলাকায়। ইজমির সেফেরিহিসার শহরের মেয়র ইসমাইল ইয়েতিস্কিন বলছেন, জলোচ্ছ্বাস এমনভাবে আঘাত করেছে যেন মনে হচ্ছে এগুলো ছোট সুনামির মতো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ফ্রিজ থেকে শুরু করে চেয়ার, টেবিলের মতো নানা ধরনের জিনিসপত্র ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে আছে। তুর্কি গণমাধ্যম টিআরটি হেবারে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, বেশকিছু গড়ি রীতিমতো একটি আরেকটির ওপর উঠে গেছে।
সেফেরিহিসার জেলায় হোটেল পরিচালনা করেন ইদিল গুনগর। তিনি বলেন, জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে এটি অনেক কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আবার এই পানিতে করে সামুদ্রিক অনেক মাছও শহরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়েছে। ভূমি থেকে প্রায় ৫০ মিটার উঁচুতে আমাদের হোটেলের বাগান আছে। সেখানে সেখানে পর্যন্ত সামুদ্রিক মাছ পাওয়া গেছে। জলোচ্ছ্বাস থামার পর পানি নেমে গেলে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে শুরু করেছি সবাই।এদিকে, গ্রিসের সামোস দ্বীপে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের সবাইকে সমুদ্র উপকূল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশটির অ্যান্টি-সিসমিক প্ল্যানিং সংস্থার প্রধান এফতিমিওস লেক্কাস গণমাধ্যমে বলেছেন, এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প। এর চেয়ে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়াটাই কঠিন।
স্থানীয় ভাইস-মেয়র জর্জ ডায়োনিসিও বলেন, আমরা এমন ভয়াবহ কিছু এর আগে দেখিনি। লোকজন সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।
তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই ভূমধ্যসাগরে অনুসন্ধানের অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তবে ভূমিকম্পের পর দুই দেশ পরস্পরের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। দুই দেশের সরকারপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন।
গ্রিস প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস এক টুইটে বলেন, আমাদের চিন্তাধারায় পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো সময় আমাদের সবাইকে এক হতে হয়, পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে হয়।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান টুইটে বলেন, এই কঠিন সময়ে আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ পরস্পরের পাশে রয়েছি। আরও অনেক দ্বন্দ্বের চেয়েও এটি অনেক বেশি মূল্যবান।