টাকা দিলেই বদলি মেলে, নিয়মের কিছু নাই
৩১ অক্টোবর ২০২০ ১০:৩৭
বগুড়া: প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সুপারের চেয়ারে বসে তিনি মনগড়া সব ভুয়া বিল তৈরি করেন। আর উপপরিচালকের চেয়ারে বসে আবার তিনিই সে ভুয়া বিলের অনুমোদন দেন। শিক্ষক বদলিতেও নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে বদলি করেন তিনি। যারা টাকা দেন না, তাদের ফাইল পাঠিয়ে দেওয়া হয় অধিদফতরে।
রংপুর পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে এসব অভিযোগ। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপপরিচালক পদেও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আর্থিক সুবিধা নিয়ে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের বদলি করে থাকেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা করেন না।
সারাবাংলাতেই এই পিটিআই সুপারের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে আরও দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভুয়া বিল বানিয়ে পিটিআইয়ের বরাদ্দের সব অর্থ তুলে নেন তিনি। আবার পিটিআই সুপার হিসেবে ভুয়াল বিল তৈরি হয়ে উপপরিচালক হিসেবে সেগুলো অনুমোদন করে থাকেন তিনি। মন্ত্রণালয় ও অধিদতফরে তার বিরুদ্ধে এসব নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে বহুবার। কিন্তু অদৃশ্য কোনো কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগীরা জানান, চলতি (অক্টোবর) মাসের ১ তারিখে ১৯৭৮ (৯) নম্বর স্মারকে এবং ৭ তারিখে ২০১৪/৭ নম্বর স্মারকে সাত জন প্রধান শিক্ষককে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী শালজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রেবেকা সুলতানাকে বদলি নীতিমালা ৩.৫ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য বদলি করে যাচ্ছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এই উপপরিচালক। গত ২৬ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলা সদরের খোচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলী, হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলেয়া ফেরদৌসসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বদলির অনুমতির জন্য ৩৮০/২ নম্বর স্মারকে মহাপরিচালক বরাবরে ফাইল পাঠানো হয়। কিন্তু সেই অনুমতি আসার আগেই এই উপপরিচালক এসব শিক্ষকের বদলির আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৪ মার্চ ২০১৯ তারিখের সর্বশেষ বদলি নীতিমালা অনুযায়ী পারস্পরিক বদলি করার কোনো সুযোগ নেই। তবে খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা করেননি। যেমন গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর গোয়ালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বদলি করেছেন পলাশবাড়ীর সুইগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর গাইবান্ধার পলাশবাড়ি দিগদাড়ি নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ শিরিনা খাতুনকে পলাশবাড়ির বাহিরডাঙা নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
আবার বাহিরডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বদলি করা হয়েছে দিগবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ধরনের নীতিমালা বহির্ভূত পারস্পরিক অনেক বদলি করেছেন উপ পরিচালক ইকবাল হোসেন।
জানা গেছে, যারা টাকা দেননি বা যোগাযোগ করেননি, তাদের আবেদন ডিডি অফিসে হবে না বলে বদলির আবেদনগুলো ঢাকায় অধিদফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের রংপুর থেকেই বদলির আদেশ দিয়েছেন।
পারস্পরিক বদলির সুযোগ না থাকলেও লালমনিরহাট আদিতমারীর চন্দনপাঠ ময়নারচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল লতিফকে আদিতমারীর ফলিমারি বিদ্যালয়ে। ফলিমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পুলিশ চন্দ্র রায়কে আদিতমারীর বুড়ির দিঘী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। বুড়ির দিঘী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদকে চন্দন পাট ময়নারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
তবে অর্থের বিনিময়ে বদলির অভিযোগ অস্বীকার করেন রংপুর পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট, প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের এই উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আরও বলেন, ‘একজন সহকারী পরিচালক আমার কারণে অন্যায় সুবিধা করতে না পেরে আমার পেছনে লেগেছে। আপনারা তদন্ত করেন। সবকিছু জানতে পারবেন। আমি এসব বিষয়ে জড়িত না।’
আরও পড়ুন-
বরাদ্দের সবই ‘লুটেপুটে’ খান রংপুর পিটিআই সুপার
সুপার সেজে বানান ভুয়া বিল, উপপরিচালক হয়ে দেন অনুমোদন
খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন পিটিআই পিটিআই সুপার বদলি রংপুর শিক্ষক বদলি সুপারিনটেন্ডেন্ট