যশোরে এমপির গণসংবর্ধনা, করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন
৩১ অক্টোবর ২০২০ ১১:১৫
যশোর: যশোর-৬ (কেশবপুর উপজেলা) আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের জন্য ‘নাগরিক গণসংবর্ধনা’র আয়োজন করেছে যশোরের নাগরিক কমিটি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে সেই আয়োজন কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। তার মৃত্যুতে ২১ জানুয়ারি আসনটি শূন্য হয়। পরে ২৯ মার্চ এ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ২১ মার্চ ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
পরে গত ১৪ জুলাই এই আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয় পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। আজ শনিবার (৩১ অক্টোবর) তার নির্বাচনে বিজয়কে ঘিরেই গণসংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে।
টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠেয় এই ‘নাগরিক গণসংবর্ধনা’র উদ্যোক্তা নাগরিক কমিটি, যশোর। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে গণসংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করবেন অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ। এই আয়োজন ঘিরে গোটা কেশবপুর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় টাঙানো হয়েছে পোস্টার-ব্যানার।
সচেতন মহল বলছেন, সামনে শীতকাল। এই সময়ে করোনা নিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরকম একটি সময়ে এমন গণসংবর্ধনার আয়োজন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এদিকে, এর আগে যশোর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কেবল নয়, মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া কারও জন্যও এমন সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়নি। ফলে এই আয়োজন নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। কেউ কেউ এমনও বলছেন, নিজেকে জাহির করার জন্যই সংসদ সদস্য চাকলাদার এই গণসংবর্ধনা আয়োজন করিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে একটি নাগরিক কমিটি, যার আহ্বায়ক করা হয়েছে অধ্যক্ষ সুলতান আহম্মেদকে। যশোরের বিভিন্ন এলাকায় টাঙানো হয়েছে চার রঙা পোস্টার, এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে সাদাকালো বিশাল বিশাল প্যানা বোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন।
অভিযোগ উঠেছে, নাগরিক কমিটি যশোরের আহ্বায়ক নিজেই জানতেন না এমন একটি অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। তাকে আহ্বায়ক করে তার বাসায় হাজির হন নাগরিক কমিটির নেতারা। গণসংবর্ধনার বিষয়টি তাকে জানালে তিনি প্রথমে রাজি হননি। পরে বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ এলে তিনি শেষ পর্যন্ত রাজি হন।
গণসংবর্ধনা আয়োজনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অনেকেই আশঙ্কার কথা জানালেও এ বিষয়ে তেমন কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, আমার জানামতে, এর আগে যশোরের কোনো এমপি বা মন্ত্রীকেও নাগরিক কমিটির ব্যানারে এরকম সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। করোনার মধ্যেই কেন এই আয়োজন, সেটা আয়োজকরা ভালো বলতে পারবেন।
তবে আয়োজন নিয়ে সমস্যা দেখছেন না জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম। তিনি বলেন, নাগরিক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গণসংবর্ধনা দেবে। তারা চাইলে দিতেই পারে। এর আগে কাউকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি বলে কখনোই হবে না, এমন কিছু না। এটি দোষের কিছু নয়।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এ আয়োজন করিনি, আয়োজন করেছে নাগরিক কমিটি। তারা আমাদের বিষয়টি জানায়ওনি। ফলে আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
এ ধরনের আয়োজনে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈর হবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার যে পরিস্থিতি, তাতে তো ঝুঁকি থাকবেই। কিন্তু সেটা নিয়েও আয়োজকরাই আসলে ভালো বলতে পারবেন। আমরা কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে জানতে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। নাগরিক কমিটির অন্য কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অধ্যক্ষ সুলতান আহম্মেদ উপনির্বাচন গণসংবর্ধনা নাগরিক কমিটি যশোর-৬ শাহীন চাকলাদার