Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কিশোর ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দেয়, ধরলে তদবির করে বাবা-মা’


৩১ অক্টোবর ২০২০ ১৭:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকদের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে কিশোর অপরাধ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। দেখা গেছে, মাইনর ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা ‘আদর’ করে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছে। আমরা যদি আটকায় তাহলে তারা এসে তদবির করছেন। তাদের কেন কিনে দিয়েছেন জিজ্ঞেস করলে বলছে ছেলের শখ।’ এই শখ ছেলেকে কোন রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে সেটা আমরা ধারণা করতে পারি না। আমরা এত ব্যস্ত হয়ে গেছি যেখানে পরিবারের সদস্যদের খবরও রাখতে পারছি না।’

সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, দমন প্রতিরোধ যেটাই বলি সেটার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ সহযোগিতা হবে কমপ্লিমেন্টারি। আমরা যেন পরষ্পর পরস্পরকে তথ্য দিয়ে, সময় দিয়ে, উপস্থিত থেকে অনুপ্রাণিত করে সহযোগিতা করি। যাতে এটির একটি সম্মানজনক সমাধান হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি সামাজিক অনুশাসনের সেই সুদিনে ফিরিয়ে আনব। যেখানে বাড়ির ছেলে-মেয়েরা অহেতুক অকারণে আড্ডার নামে বাইরে থাকবে না, বাবা মায়ের নজরদারিতে থাকবে। সামাজিক অনুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনাদের প্রত্যেকের মধ্যে বাবা, মা, ভাই, বোন সন্তান রয়েছে। অহেতুক বাইরে আড্ডা দেয়া, কুসঙ্গে জড়িয়ে পড়া এটাকে আমাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে।’

কমিউনিটি পুলিশিংকে আরও সক্রিয় করার আহবান জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, উপ-কমিশনার (সদর) আমির জাফর, উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক এবং কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অহিদ সিরাজ স্বপন।

এদিকে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত আরেক সভায় জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক ইভ টিজিং, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সবার সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আক্রান্ত অনেক মেয়েই কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক, তারা ইভ টিজিংয়েরও শিকার হচ্ছে, এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। এলাকার ইভ টিজারদের সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। স্কুল-কলেজে যাবার সময় যারা উত্যক্ত করে, প্রথমে তাদের সতর্ক করেন, কাউন্সেলিং করেন। না হলে পুলিশের কাছে দেন। ইউএনও সাহেবের কাছে অভিযোগ করেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অভিভাবকদের সন্তানদের বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’

কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যদের উদ্দেশে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আপনার সামনে যদি একটি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘঠিত হয়, তাহলে সাধারণ নাগরিক হিসেবেও কিন্তু আপনি তাকে আটক করে রাখতে পারেন। তবে তাকে শাস্তি দেওয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই। পুলিশ হিসেবে আমারও নেই। আপনাকে অবশ্যই তাকে ধরে পুলিশের কাছে দিয়ে দিতে হবে। আমরা তাকে আদালতে পাঠাব। আদালত তাকে শাস্তি দেবে।’

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা ‍তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে মাদক। মাদকসহ যেকোনো অপরাধের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি। অপরাধ হতে পারে, জিরো ক্রাইমের দেশ বিশ্বে কোথাও নেই। আমরা অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করব। যত ঘটনাই ঘটেছে, প্রত্যেক ঘটনায় আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিচারের নিমিত্তে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি সফল বলব না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার। অপরাধীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলার কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামসুল আরেফিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে হাটহাজারী উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি নুরুল হুদা, মিরসরাই কমিউনিটি পুলিশিং এর সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন, বোয়ালখালী কমিউনিটি পুলিশিং এর সেক্রেটারি মনির খান বক্তব্য রাখেন।

পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার দেশজুড়ে এই কমিউনিটি পুলিশিং ডে পালন করা হয়।

বাবা-মা মোটারসাইকেল সিএমপি কমিশনার

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর