Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মাদক সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থাকবে’


১ নভেম্বর ২০২০ ১৩:৫৬

ফাইল ফটো

ঢাকা: তাৎক্ষণিকভাবে নগদ মোটা টাকার লোভে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে দেশের যুব সমাজকে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই ধরনের কোন কাজের সাথে কেউ যেন সম্পৃক্ত না হয়। হয়ত তাৎক্ষণিকভাবে নগদ মোটা টাকা দিতে পারে। কিন্তু আসলে এখানে কোন জীবনের নিশ্চয়তা থাকে না। আর মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের কিন্তু খুব কঠোর অবস্থানটা বজায় থাকবে, এটা মাথায় রাখতে হবে।

রোববার (১ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনোভাইরাসের কারণে আজকে সারাবিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই সঙ্গে আহ্বান করেছি আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেখানেও আমরা আমাদের যুব সমাজকে ধন্যবাদ জানাই। যখন ধান কাটা নিয়ে সমস্যা ছিল যখন আহ্বান করলাম, আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। যে কোনো কাজেরই মর্যাদা আছে। যে জিনিস খেয়ে আমাদের জীবন বাঁচে আর সেই ফসলের মাঠে কাজ করলে কারও মর্যাদাহানি হয় না ‘বরং এই কাজ করে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর ফলে মনে করি আমাদের ছাত্র এবং যুবদের সম্মান জাতির কাছে, আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজের কাজ নিজে করতে কোনো লজ্জা নেই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে আরেকটি বিষয় আমি বলতে চাই মাদক জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে কেউ যেন সম্পৃক্ত না হয়। হয়ত তাৎক্ষণিকভাবে নগদ মোটা টাকা দিতে পারে। কিন্তু আসলে এখানে কোনো জীবনের নিশ্চয়তা থাকে না। আর এর বিরুদ্ধে আমাদের যে কঠোর অবস্থান, মাদক সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দুর্নীতি এর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানটা কিন্তু খুব কঠোর থাকবে, এটা মাথায় রাখতে হবে। সব জায়গায় একটা জবাবদিহিতা থাকতে হবে এবং দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে এবং এই দায়িত্ববোধটা নিয়েই আগামী দিনে চলতে হবে, সেটাই আমরা চাই।’

কারিগরি শিক্ষার দিকে সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা হলে পর দেশে বিদেশে কাজ করার সুযোগ হয়। সেখানেও আমার যুবকদের প্রতি একটি আহ্বান থাকবে। কারণ আমরা জানি অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়ে জমি-জমা বিক্রি করে দিয়ে লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশে ছুটে যায় সোনার হরিণ ধরতে; তারপর দেখা যায় সেখানে তো না কাজ পাওয়া যায়, না চাকরি পাওয়া যায়, অকাতরে জীবনটা দিতে হয়।’

‘বাবা-মা ভাইবোন তাদের কি অবস্থাটা দাঁড়ায়? অথচ এটি কিন্তু প্রয়োজন নেই। আমরা বিদেশে পাঠানোর জন্য আমাদের প্রত্যেকটা ডিজিটাল সেন্টারে সমগ্র বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা আছে। কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে কোথায় সঠিক চাকরি, বেতন আছে কি না? বেতন পাবে কি না, প্রতারণার শিকার হচ্ছে কি না, সেগুলোর তথ্য নেওয়ারও সুযোগ এখন আছে। অর্থ্যাৎ তথ্য প্রযুক্তির যুগে আজকে বিশ্বটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ, একটা ছোট্ট জায়গা। সেখান থেকে সব খবর পাওয়া যায়। সেটা নিশ্চিত করেই কিন্তু এই সোনার হরিণ ধরার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো ভালো, যেতে হলে সবকিছু জেনে যাওয়া ভালো।’

আর তাছাড়া নিজের দেশেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সমগ্র বাংলাদেশে একশোটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেওয়ার পদক্ষেপসহ যুব সমাজকে নিজস্ব উদ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে এটি ঠিক, একটা সমস্যা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছুতে একটা স্থবিরতা এসে গেছে। এমনকি খেলাধুলা সংস্কৃতি চর্চা; বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল, সেখানে কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকেনি। সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সবকিছুই যেন স্থবির করে দিয়েছে। সবথেকে দুঃখজনক আমাদের ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারছে না। এটা শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্বব্যাপী এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

‘বর্তমানে আবার আপনারা জানেন যে, বিশ্বব্যাপী সেই করোনাভাইরাসের একটা প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছে। এখন ইউরোপের অনেক দেশ ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে অনেক দেশ ইতোমধ্যে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। আমাদেও সবাইকে কিন্তু সুরক্ষিত থাকতে হবে। যেকোন কাজে সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। আমি হয়ত মাস্ক ছাড়া বক্ততা দিচ্ছি, আপনারা ভাবছেন আমি মাস্ক ছাড়া কেন? আমার আশপাশে কিন্তু বেশি লোক নেই’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাস্ক সারাক্ষণ পরে থাকতে হবে তা নয় কিন্তু যখন কারো সাথে মিশবেন না কোন জনসমাগম বা মাকের্টে যাবেন তখন অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষিত করবেন অপরকেও সুরক্ষিত করবেন। এ জন্য সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাস থেকে যেভাবে আমরা মানুষকে রক্ষা করেছি, সেটা যেন রক্ষা করতে পারি। কারণ এটি প্রত্যেকের নিজ নিজ একটা দায়িত্ব থাকবে। সেটিই আমরা চাই।’

যুব সমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের এ অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য আমরা যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, যেন আমাদের অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত থাকে। কাজেই আবারও এখন সময় এসে গেছে, এখন থেকে বাইরে থেকে আমাদের দেশে যারা আসবে, তাদের পরীক্ষা করা, তাদের কোয়ারেনটাইনে রাখা, এটা আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা পোর্টে এখন থেকে আবার সেই আগের মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ ঢুকতে গেলেই করোনা ভাইরাস নিয়ে ঢুকছে কি না এটা পরীক্ষা করতে হবে। কারণ আমার দেশের মানুষের সুরক্ষাটা নিশ্চিত করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিটা স্থবির না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। যার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক গতি অনেকটা সচল আছে। কিন্তু অনেক উন্নত দেশও কিন্তু এটা করতে পারছে না।’

সরকারের অগ্রাধিকার মেগাপ্রজেক্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজ এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মাঝখানে হয়ত দুইটা মাস আমাদের সময় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কাজ এগিয়ে চলছে এবং এই কাজগুলো হয়ে গেলে পরে সেখানেও বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এটাই বলবো, আমাদের অর্থ্যাৎ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে অর্থনীতি যেমন গতিশীলতা পেয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশে মর্যাদা অর্জন করেছি। আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমাদের রিজার্ভ আজকে ৪১ বিলিয়ন। আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের যেন অর্থনীতির চাকাটা সচল থাকে তার জন্য যা যা করণীয় করে যাচ্ছি।’

‘এটা কার জন্য করছি, আজকে যারা যুবক, আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হবে। আবার আজকে যে শিশুটা জন্ম নিল, তার ভবিষ্যৎটা যেন উন্নত হয় সেই বিষয়টা চিন্তা করেই আমাদের এই সমস্ত পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। কাজেই আমি বলবো যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে যুব সমাজকে বলবো-অমনি একটা ডিগ্রি নিয়েই কোথাও চাকরির পিছনে না ছুটে নিজে কিভাবে কিছু করা যায়, নিজে কাজ করব, আরও দশজনকে চাকরি দেব, নিজে উদ্যোক্তা হবো। নিজেই বস হবো, এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে। আমি আমার বস হবো, আমি কাজ করব। আমার মধ্যে সেই শক্তিটা আছে, সেই শক্তিটা আমি কাজে লাগাবো। এই চিন্তাটা যেন মাথায় থাকে আমাদের যুবকদের। আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমাদের তো সময় শেষ। কিন্তু যুবকরাই তো আসলে দেশের প্রাণসঞ্চার করবে। কাজেই সেইভাবেই আমাদের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে যায় এবং আমি সেটি চাই।’

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পৃর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতার হোসেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আকতারুজ্জামান খান কবির। এছাড়া সফল যুব উদ্যোক্তা হিসাবে দুইজন মতবিনিময় করেন।

আওয়ামী লীগ টপ নিউজ দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর