Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখনো দেখা নেই পেপ্যালের, বিড়ম্বনা কাটেনি ফ্রিল্যান্সারদের


২ নভেম্বর ২০২০ ১৭:২৩

ছবি: বিবিসি

ঢাকা: অর্থ স্থানান্তরে বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পেপ্যালের সেবা এখনো আসেনি দেশে। ফলে গত একদশক ধরেই ‘সম্ভাবনাময়’ বলে আসা আউটসোর্সিং শিল্পে যুক্ত ফ্রিল্যান্সারদের বিড়ম্বনাও কাটেনি। প্রতিনিয়তেই সংশ্লিষ্ট লেনদেন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। পেপ্যালের মাধ্যমে লেনদেন সুবিধা না থাকায় অনেক ক্রেতাকেই অর্ডার করার আগে দুইবার ভাবতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাতিল হচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশি অর্ডার। পেপ্যাল না থাকাকে এখনো দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দেখা হচ্ছে। সরকার অবশ্য বলছে, অর্থ লেনদেনের এই মাধ্যমটিকে দেশে নিয়ে আসতে তারা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনে প্রণোদনা দিয়ে হলেও পেপ্যালকে দেশে নিয়ে আসা উচিত।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বাংলাদেশে পেপ্যাল আসছে বলে ২০১৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। বড়সড় করে জানানো হয়, দেশে পেপ্যালের যাত্রা শুরু। পরে জানা যায়, পেপ্যালের একটি সার্ভিস ‘জুম’ বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সব ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন করা যায় না। আর দেশ জুম সার্ভিসও কোনোভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।

ফ্রিল্যান্সার মো. শহিদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, জুম থাকলেও পেপ্যালের বিকল্প হিসেবে আমরা পেওনিয়ার ব্যবহার করি। কারণ আমেরিকার ক্রেতারা জুম দিয়ে পে করতে পারে না। জুম দিয়ে শুধুমাত্র পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে লেনদেন করা যায়। করপোরেট কোম্পানি জুম দিয়ে লেনদেন করতে পারে না। আরও ঝামেলা আছে। সম্প্রতি পেওনিয়ারে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। তখন একমাস আমরা পেওনিয়ার দিয়েও লেনদেন করতে পারিনি। এখনও অনেক ক্রেতা পেওনিয়ার দিয়ে লেনদেন করতে পারছেন না। কোনো কোনো ব্যাংক পেওনিয়ারে লেনদেন বন্ধ রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বেশি টাকা খরচ করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন দিয়ে টাকা আনা যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে পেপ্যালের কোনো বিকল্প না থাকায় কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে পেপ্যাল দিয়ে লেনদেন করতে না পারার কারণ বিদেশি ক্রেতারা অনেক সময় আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ হারায়।’

আরেক ফ্রিল্যান্সার সাইফুল ইসলাম সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে পেপ্যাল না থাকায় আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছি। বিদেশি কারও কাজ করতে গেলে তারা পেপ্যালে পেমেন্ট করতে চায়। অনেকেই পেওনিয়ার ব্যবহার করে না। পেপ্যাল না থাকায় আমরা কাজের টাকা নিতে সমস্যায় পড়ি। এটার জন্য আমাদরে খুব হয়রানি হতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ থেকেও অনেকে পেপ্যাল ব্যবহার করে থাকে জানিয়ে সবুজ আরও বলেন, ‘যাদের আত্মীয়-স্বজন দেশের বাইরে থাকেন, তাদের অনেকে পেপ্যাল ব্যবহার করেন। তবে ওই অ্যাকাউন্ট করতে হয় দেশের বাইরে অবস্থান করা আত্ময়-স্বজনদের নামে। এ ক্ষেত্রেও ঝামেলা হয়। অনেক সময় পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। ভেরিফিকেশনে ঝামেলা করে। কারণ পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে বাইরের দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে পেপ্যাল না থাকার বিষয়টি আসলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এখনো সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।’

জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু ফ্রিল্যান্সার নয়, পেপ্যাল এলে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত সবার জন্যই সুবিধা হবে। আমাদের সঙ্গে পেপ্যালের অনেকবার মিটিং হয়েছে। তাদের ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী আপাতত তাদের বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা নেই। বিকল্প হিসেবে আমরা একটি স্বাধীন কার্ড করেছি। এতে যৌথভাবে যুক্ত হয়েছে পেওনিয়ার, ব্যাংক এশিয়া ও মাস্টার কার্ড। তবে এই কার্ডটিকেও পুরোপুরিভাবে পেপ্যালের বিকল্প বলা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘পেপ্যাল আসতে চাচ্ছে না। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও কোনো আপত্তি নেই। তাহলে যেহেতু তারা আসতে চাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে এমন কিছু প্রস্তাব দিতে পারি যেন তারা আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আমরা যেমন প্রণোদনা দিয়ে থাকি, তেমনি পেপ্যালের জন্যও প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে। তাহলে হয়তো তারা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।’

বেসিসের জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি ফারাহানা এ রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পেপ্যাল বাংলাদেশে এলে আউটসোর্সিং আরও ত্বরান্বিত হতো। ৫ বিলিয়ন ডলারের যে টার্গেট তা পূরণ সহজ হতো। পেপ্যাল এলে তৃণমূলের অনেক মানুষকে খাতটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেত এবং অনেক মানুষকে সাবলম্বী করা সম্ভব হতো।’

মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে পেপ্যাল নিয়ে আসতে আমরা চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে।’

মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্য ও যোযোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সারাবাংলাকে বলেন, পেপ্যালের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করতে আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া এর আগে যেসব সমস্যার কথা তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দেশে এখন সেসব সমস্যা নেই। ই কেওয়াইসি সুবিধা চালু করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি শিগগিরই ইতিবাচক কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে।’

অনলাইন পেমেন্ট অনলাইন লেনদেন আউটসোর্সিং পেপ্যাল ফ্রিল্যান্সিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর