Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৫ লাখের পাম্প কেনা হয়েছে ৩ কোটি টাকায়!


২ নভেম্বর ২০২০ ২০:০১

ঢাকা: চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্রের জন্য দুটি বৈদ্যুতিক পাম্প কেনা হয়েছে মূল দামের চেয়ে প্রায় ১২গুণ বেশি দিয়ে। অর্থাৎ পাম্পের দাম প্রায় ২৫ লাখ টাকা, কিন্তু সেটি কেনা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকায়। আর সম্প্রতি পাম্প কেনার এই নয়/ছয়’র প্রমাণ উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান কর্মকর্তার তদন্তে।

দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী অনুসন্ধান শেষে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে কমিশনে মামলার জন্য সুপারিশ করেছেন। যেকোনো মুহূর্তে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দুটি বৈদ্যুতিক পাম্পের প্রয়োজন ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্রয় পরিদফতর পাম্প ক্রয়ের জন্য ২০১৬ সালে সাত সদস্যের একটি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। যে কমিটিতে ছিলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) অতিরিক্ত পরিচালক (বাজেট)(বর্তমানে-নিয়ন্ত্রক হিসাব ও অর্থ) মিজানুর রহমান সরকার, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওযার স্টেশনের ম্যানেজার ভূবণ বিজয় দত্ত, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সাবেক পরিচালক (ক্রয় অধিদফতর)(বর্তমানে-প্রধান প্রকৌশলী সার্ভিসেস) মো. আবু ইউসুফ, সিদ্ধিরগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট ও তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাবেক ম্যানেজার, প্রধান প্রকৌশলী মো. তোফাজ্জল হোসেন, আইইবি ঢাকার প্রকৌশলী হামিদুল হক, বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়নাল হক, বিউবোর প্রধান প্রকৌশলী এ এইচ এম কামাল।

বিজ্ঞাপন

সূত্র আরও জানায়, এ প্রকল্পে মটর-পাম্পসহ যন্ত্রাংশের ঠিকাদার জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান। ওই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেও কারসাজি করা হয় সুনিপুনভাবে। এই ক্রয় কমিটি এমনভাবে শর্ত দেয় যাতে পাওয়ার টেক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ ঠিকাদারি কাজে অংশ নিতে না পারে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানই বৈদ্যুতিক বিশেষ পাম্পগুলো সরবরাহের কাজ পায়। পরে ভারত থেকে আসে পাম্পগুলো।

এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ৩ লাখ ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যে পিডিবি’র সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন হলেও সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মাত্র ৩০ হাজার ১৭ ডলার ইসলামী ব্যাংকের শ্যামলী শাখায় এলসির মাধ্যমে ভারতে পাঠায়। ঠিকাদারের লাভ ২০ শতাংশ ধরা হলেও পাম্পের মোট খরচ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ২১ মার্কিন ডলার। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাকি ৩ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৯ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাণ্ডারে মেশিনগুলো মজুদ আছে। অর্থাৎ অতি জরুরি বিবেচনায় অতিরিক্ত ও অস্বাবিক দামে মেশিনগুলো কেনা হলেও সেগুলো এখনও অব্যবহৃত অবস্থায় গোডাউনে পড়ে আছে। কমার্শিয়াল ইনভয়েস ও আমদানিকারকের এলসি অনুযায়ী ওই পাম্পগুলোর দাম ৩০ হাজার ১৭ ইউএস ডলার হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে মাত্রারিক্ত মূল্য ৩ লাখ ৬৫ হাজার ইউএস ডলার দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত), ব্যবস্থাপক প্রকৌশল ভুবন বিজয় দত্ত, নেসকো লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) ও সার্ভিসের এ এইচ এম কামাল, বিদ্যুৎ বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত),পরিচালক, নকশা ও পরিদর্শন পরিদফতর-১, মো. তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) (বর্তমানে পিআরএল ভোগরত) মো. আবু ইউসুফ, উপ-ব্যবস্থাপক (নির্বাহী প্রকৌশলী) (ভারপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পরিচালক (বাজেট) মো. মিজানুর রহমান ও কাজ পাওয়া মেসার্স পাওয়ার টেক ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. আব্দুল আলীম।

এ বিষয়ে দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, পাম্প কেনা নিয়ে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানকারী টিম কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এরপর কমিশন তার পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র) মো. জাকির হোসেনকে তার ব্যক্তিগত ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, দুদকে এই বিষয়ে অনেক আগে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেটা দুদক অনুসন্ধান করে কয়েকজনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বেশিরভাগই এখন অবসরে রয়েছেন। তাই এই বিষয়ে আমাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ক্রয় পরিদফতরের পরিচালক সাইদ একরাম মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তাই এ নিয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’

১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৫ লাখ ৩ কোটি চট্টগ্রাম টপ নিউজ দুর্নীতি দমন কমিশন পাম্প শিকলবাহা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর