যমুনার ভাঙন ঠেকাতে আসছে ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্প
২ নভেম্বর ২০২০ ২২:১৩
ঢাকা: যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জের তিনটি এলাকা রক্ষায় ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত আবাসিক ভবন, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, হাটবাজার, ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো, ফসলি ও কৃষিজমি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি রক্ষা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে আনুমানিক ৪ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার সম্পদ যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত প্রকল্পটিসহ আরও তিনটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ এবং ১ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত নদীতীর সংরক্ষণ কাজ পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ।
সূত্র জানায়, ভাঙন রোধের এ প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় একনেক উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়া রোধসহ প্রকল্প এলাকার উজানে এবং ভাটিতে নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ আউটফ্লাং হওয়া রোধ করা যাবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সমগ্র সিরাজগঞ্জ জেলাকে বন্যা থেকে রক্ষা করা এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ জেলা ব্রক্ষ্মপুত্র (যমুনা) নদের ডান তীরে অবস্থিত। এর মোট আয়তন দুই হাজার ৪৯৭ দশমিক ৯২ বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০০ হেক্টর। যমুনা নদীর ডান তীর ভাঙনে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্রক্ষ্মপুত্র ডান তীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সালে রংপুর জেলার কাউনিয়া থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার ভেড়াখোলা পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলা থেকে শাহাজাদপুর উপজেলার ভেড়াখোলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে এলাকায় অবস্থিত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর পাকা রাস্তা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কসহ হাজার কোটি টাকার ফসল, সম্পদ ও স্থাপনা বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে। গত কয়েক বছরের বন্যায় নদীর ডান তীর ভাঙনের ফলে বাহুকা-শুভগাছা এলাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের খুব কাছে চলে এসেছে এবং বাঁধের টো-লাইনসহ প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নিয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বসতবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামো যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা এবং এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
একনেক উঠতে যাওয়া অন্য তিন প্রকল্প
কক্সবাজার জেলায় শুটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, আমির বাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালনলাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং পাঁচদোনা-ভাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়কে একস্তর নিচ দিয়ে উভয়পাশের পৃথক সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণ (ডাঙ্গা বাজার-ইসলামপুর লিংকসহ)।
৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক কাজিপুর উপজেলা নদী ভাঙন যমুনা রক্ষা সিরাজগঞ্জ