Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মোশতাক-জিয়ার পরিকল্পনা ও হুকুমেই জেলহত্যা: শেখ হাসিনা


৩ নভেম্বর ২০২০ ২০:৪১

ঢাকা: জেলহত্যার ঘটনা রাজনৈতিক চক্রান্ত দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আর সেনাপতি জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনা এবং হুকুমেই সেদিন কারাগারের দরজা খুলে খুনিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এবং তারাই এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রক্তাক্ত-শোকাবহ জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। সভায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর দেখেছি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার খেলা। ১৫ আগস্টের পর এই ঘটনাকে এমনভাবে দেখানো হচ্ছিল যে, এটা একটা পরিবারকে হত্যা করা। শুধু হত্যাই করা হয়নি, সেদিন নানাভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। এমনভাবে মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালানো হয়েছিল যে, এই হত্যাকাণ্ডটা শুধু একটি পরিবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেই আমরা দেখলাম ৩রা নভেম্বরের ঘটনা।’

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতার দখল নিল খুনি মোশতাক। খুনি মোশতাক যে চক্রান্ত করেছিল এবং সেই চক্রান্তে তাদের সঙ্গে যারা ছিল সেটা প্রমাণিত হয়ে গেল যখন মোশতাক রাষ্ট্রপতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করল। কাজেই এটা খুব স্বাভাবিকভাবে প্রতীয়মান হয় এই ষড়যন্ত্রের সাথে মোশতাকের একেবারে ডানহাত-ই ছিল জিয়াউর রহমান।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘তারা শুধু ক্ষমতা দখল না। খুনিদের ইনডেমনিটি দেওয়া এবং আমাদের যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেই চেতনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়া শুরু করল। এবং বাংলাদেশটা হয়ে গেলো খুনিদের রাজত্ব। এরপরে ৩রা নভেম্বরের ঘটনা। অর্থাৎ ২ নভেম্বর রাতে কেন্দ্রীয় কারাগারে খুনিদের প্রবেশ। খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, রাতের বেলা; কারণ কারাগার সবসময় সূর্য ডোবার আগেই লক হয়। এরপর কেউ আর প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু সেদিন গভীর রাতে যখন কারাগারে ১৫ আগস্টের খুনিরা হাজির হলো কারাগারে প্রবেশের জন্য- তখন কারাগারে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল তারা বাধা দিয়েছিল। তারা বলেছিল, এভাবে কারাগারে প্রবেশ করা যায় না। সেই সময় অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোন যায় যে, তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। কারণ, তারা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছে। কিন্তু সেইসঙ্গে তারা অস্ত্রও নিয়ে যাবে। যে কারণে তারা বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু সেই বাধা থেকে কারারক্ষীদের বিরত করা হলো। বলা হলো, না তারা যেভাবে যেতে চায়, সেইভাবেই যেতে দেওয়া হোক।’

কারাগারের ভিতরে নির্মমভাবে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার আরও বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কারাগারে কাদের হত্যা করা হলো? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদার আসন প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ছয় দফা, সত্তরের নির্বাচনে বিজয়, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছেন যাদেরকে নিয়ে।’ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের কথা তুলে ধরে জাতির পিতার পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশ গঠনে মনোনিবেশের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশটাকে গড়ে তুলেছিলেন। একটা বিধস্ত বাংলাদেশ। ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রা শুরু করে একটি দেশকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গড়ে তুলছিলেন তখনই কিন্তু আঘাত আসে। কাজেই ১৫ আগস্টের ঘটনাকে যারা একসময় শুধু একটা পারিবারিক ঘটনা হিসেবে অপপ্রচার চালাতে চেষ্টা করে তাদের আসল উদ্দেশ্যটা ধরা পড়ে যায় ৩রা নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। যেটা শুধু পারিবারিক হত্যাকাণ্ড না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা মানতে পারেনি, স্বাধীন বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করতে পারেনি, তাদের দোসররাই ছিল এর সঙ্গে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এরপর মোশতাকও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কারণ যারা বেঈমানি করে, তারা মীরজাফর হয়। মীরজাফর-ই নামটা গালি হয়ে গেছে। কারণ, সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে মীরজাফর বেঈমানি করেছিল। আর এই মোশতাক আরেকজন। যে বেঈমানি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা এবং ৩রা নভেম্বর জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যা করেছে। কারণ, কারাগারে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি তখন মোশতাক আর জিয়াউর রহমান হচ্ছে সেনাপতি। তাদের পরিকল্পনায় ও হুকুমে কারাগারের দরজা খুলে খুনিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এবং তারাই হত্যাকাণ্ডটা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশটাকে তারা নিয়ে যাচ্ছিল ভিন্নপথে। এক পর্যায়ে মোশতাকের পতন হয়। এরপর সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান একদিকে সেনাপ্রধান, অপরদিকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। যেটা সেনা আইনেও নেই, রুলসেও নেই। কাজেই এখান থেকে বোঝা যায়, চক্রান্তটা কোথায়। এটা যে একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত- সেটাই প্রমাণ হয়। এরপরেও বাংলাদেশের যে অবস্থাটা আমরা দেখি, একের পর এক মুক্তিযোদ্ধা অফিসার সৈনিক এবং সাধারণ সৈনিক, সেনাবাহিনীর অফিসার সৈনিকদের হত্যা করা হয়। অপরদিকে এয়াফোর্সের ৫৬৫জন অফিসারও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ১৯৭৫ থেকে আমরা যদি দেখি, প্রতিরাতে কারফিউ চলতো। রাত ১১টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বাংলাদেশে কারফিউ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মানুষ একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, তাদের জীবনটা সুন্দর হবে। যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। তিনি নিজের জীবনের জন্য কিছুই চাননি। এই বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা এনে দিবেন এবং সেইসঙ্গে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করবেন- এটাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য। বাংলাদেশের মানুষে খেয়ে-পরে সুন্দরভাবে বাঁচবে। আর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর বিশ্বব্যাপী আমাদের যে একটা সম্মান ছিল সেটা ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা হারাই। একটা খুনি জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে হয়।’

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকতে শুধু হত্যাকাণ্ডই ঘটায়নি, একটি জাতি ও প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যারা মেধাবী ছাত্র, তাদের হাতে তুলে দিয়েছে অস্ত্র ও অর্থ। বানিয়েছে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক- এইসব দিয়ে প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার এবং কুক্ষিগত করবার চেষ্টা করেছে।’

বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাারা এই অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করে, যারা সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করে, যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করে- তাদের আমি এটাই বলব, তারা কি ৩রা নভেম্বরের ঘটনা একবার কোনোদিন ভেবে দেখেছে? এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত- সেটি একবার চিন্তা করেছে? জেলখানার মতো একটি সুরক্ষিত জায়গায় খুনিদের প্রবেশ করার অনুমতি কে দিয়েছে? তারা কি কখনও চিন্তা করেছে? সেই চিন্তা তো তারা করেনি। তাদের বিবেক তো সেখানে নাড়া দেয় না, তাদের বিবেক তো সে কথা বলে না। যে নেতারা দিনরাত পরিশ্রম করেছে, যুদ্ধ পরিচালনা করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছে- তাদের কারাগারের মধ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আর জাতির পিতাকে তো সপরিবারে- এমনকি আমার দশ বছরের শিশু ভাইটিকেও ছাড়েনি; যেন ওই রক্তের কেউ বেঁচে না থাকে, ক্ষমতায় না আসে।‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর ইনকোয়ারি কমিশনের স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসি এমপিকে জিয়াউর রহমান ভিসা দেয়নি। বাংলাদেশে আসতে দেয়নি। কেন দেয়নি? জিয়া যদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নাই থাকবে, তাহলে এই তদন্ত কমিশনের একজন সদস্যকে আসতে দেয়নি কেন? সেকথা কী তারা ভাবে? বিএনপি নেতাদেরও আমি বলব, তারা চিন্তা করে দেখুক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী হতে দিয়েছে, দল করতে দিয়েছে। কেন দিলো? এদের প্রত্যেকেরই একটা লক্ষ্য ছিল। ১৫ আগস্টের যে ঘটনা এটা শুধু একটা পরিবারকে হত্যা নয়, একটা আদর্শকে হত্যা, দেশকে হত্যা। আর দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আবারও প্রমাণ হয় জেল হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।’

১৫ আগস্ট জেলহত্যা পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী মোশতাক-জিয়া শেখ হাসিনা হুকুম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর