Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০২৩ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার হবে ৩শ কোটি ডলারের


৩ নভেম্বর ২০২০ ২০:৩৪

ঢাকা: বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের আকার প্রায় দুইশ কোটি মার্কিন ডলার। বছরে ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারে এই বাজার বাড়ছে। তবে ২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ই-কমার্স খাতের বাজারের আকার দাঁড়াবে তিনশ কোটি মার্কিন ডলারে।

মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স এবং ভোক্তা অধিকার: প্রতিবন্ধকতা ও সুপারিশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, তবে এ ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতরণার উদাহরণ দেখা যাচ্ছে। এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সম্প্রতি টিসিবি অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এতে করে ভোক্তাদের ভোগান্তি লাঘব করা সম্ভব হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, ডিজিটাল ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অধীনে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনার জন্য ই-কমার্সকে ট্রেড লাইসেন্স অন্তর্ভুক্ত করা হবে, ই-কমার্স পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। পাশাপাশি অভিযোগ সেল গঠন, ঋণপ্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান, ই-কমার্স ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকি চিহ্নিত করে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং লজিস্টিক সাপোর্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের আকার প্রায় দুইশ কোটি ডলার। তা বার্ষিক ৫০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমাতে সামাজিক দূরত্ব মানার কারণে প্রথাগত ব্যবসায়িক খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকাশ লাভ করেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা। কিন্তু ই-কমার্স খাতকে টেকসই করার পাশাপাশি খাতটিকে আরও সংগঠিত করা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

ডিসিসিআই সভাপতি এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে কোভিড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ই-কমার্স খাতকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা, ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিক বিধি প্রয়োগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশের ব্যাংকের তদারকি বাড়ানো, ই-কমার্স সেবার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ও এসডি যৌক্তিক হারে কমাতে হবে। এছাড়াও ই-কমার্সভিত্তিক ব্যবসায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং ও ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেবার শর্তগুলো সহজ করা এবং এ খাতের ক্ষুদ্র ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান সমস্য সমূহ চিহ্নিতকরে তার যথাযথ সমাধান না করা হলে কিছু অসৎ লোক তার অপব্যবহার করতে পারে। এতে করে এখাতের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।

তিনি বলেন, দেশে ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্সের বিস্তৃতি অত্যন্ত বেশি এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্পমূল্যে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

গোলাম রহমান বলেন, ই-কমার্স খাতের বিস্তৃতির গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি যথাযথ নীতিমালা করা না হয়, তাহলে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।

মূল প্রবন্ধে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় ই-কমার্স প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে এখাতের মোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সাফল্য পেয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি এবং ফেসবুকভিত্তিক বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩১২ কোটি টাকা। তবে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অধিকাংশরই ট্রেড লাইসেন্স নেই এবং এ ধরনের উদ্যোক্তাদের একটি নিবন্ধন কার্যক্রমের তাওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে তাদের আর্থিক ঋণ সুবিধা পাওয়া বিষয়টি সহজতর হবে। এর মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় আনাও সম্ভব হবে।

আলমাস কবির বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ই-কমার্স খাতের বাজারের আকার তিনশ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।

অনুষ্ঠানে পাঠাও সভাপতি ফাহিম আহমেদ বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা অর্জনের জন্য সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং এর কার্যকর বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। তিনি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরও বেশি সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

দারাজ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক বলেন, ২০১৭ সাল থেকে দারাজ ঢাকা শহরের বাইরে তৃণমূল পর্যায়ে সেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে। দারাজের বর্তমানে ৭৭টি বিক্রয়কেন্দ্র (হাব) রয়েছে।

স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা জাবিন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প হলো ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’, যাদের ৫০০ কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। এই ফান্ড থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট) মোহা. হুমায়ুন কবির বলেন, এ খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের (মাইক্রো মার্চেন্ট) প্রয়োজনীয় বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিরলসভাবে কাজ করছে।

ই-কমার্স ই-কমার্সের বাজার ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান ডিসিসিআই ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর