‘অল্প সময়ে অল্প খরচে ভোগান্তিমুক্ত বিচারপ্রাপ্তি মানুষের অধিকার’
৪ নভেম্বর ২০২০ ১৬:১৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খুব অল্প সময়ে, অল্প খরচে ভোগান্তিমুক্ত বিচারপ্রাপ্তি মানুষের অধিকার। বিচার বিভাগ এই দ্রুত সময়ে অল্প খরচে যদি বিচার দিতে পারেন। তাহলে মানুষের একটা আস্থা বিশ্বাসও বাড়বে। এ ব্যাপারে সবাইকে একটু বিশেষ নজর দিতে হবে।’
বুধবার (৪ নভেম্বর) সকালে নবনির্মিত ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ঢাকা-এর উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ঢাকা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগের উন্নয়নে তার সরকারের সময়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সংস্কার কর্মসূচির উল্লেখ করে বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় আমরা বিশ্বাস করি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আন্তরিক। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরেই দি কোর্ট অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৯ পাসের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ কাজটি স্থায়ী রূপ আমরা প্রদান করেছি।’
‘সুষ্ঠ বিচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাজেটে টাকা বরাদ্দ করি। ৪২টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য আট থেকে দশতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৯টি জেলায় নবনির্মিত ভবন উদ্ধোধন করা হয়েছে। অবশিষ্ট জেলাগুলোতেও আমরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমি বলেছিলাম সবগুলো একবারে একটা প্রজেক্টে নিয়ে আসলে আমরা ধাপে ধাপে করে ফেলতে পারতাম, ভাগে ভাগে না আনলে। ইতোমধ্যে ৪২টির কাজ শুরু হয়েছে, ২৯টির কাজ সম্পন্ন আর বাকি যেগুলো আছে সেগুলোও আমরা করে দেবো।’
‘কারণ আমি চাই, যারা বিচার করবেন বা বিচার চাইতে যাবেন বা আমাদের আইনজীবীরা যারা বিচার দেয়ায় সহায়তা করবেন বা অন্যান্য যারা সহযোগিতা করে থাকেন, সকলে যেন একটা সুষ্ঠ পরিবেশে বসে কাজ করতে পারেন, সেটাই আমরা করে দিতে চাচ্ছি।’
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল আদালত ভবন উদ্বোধন করার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি আশা করি, এর ফলে আমাদের দেশের মানুষের বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তিটা অন্তত কমে যাবে। তারা যেন ন্যায় বিচার পায়। আমাদের মতো যেন কাউকে এই বিচারহীনতায় ভুগতে না হয়।’
বর্তমান সরকারের আমলে নারী শিশু নির্যাতন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আরেকটি সমস্যা মাঝখানে আমাদের ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছিল। এটা যদিও বিশ্বব্যাপী আছে কিন্তু বাংলাদেশে এই যে নারী ধর্ষণ শিশু ধর্ষণ এই ধরনের একটা জঘন্য অপরাধ। কাজেই এদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য বা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ-২০২০ প্রণয়ন করে অধ্যাদেশ জারি করে দিয়েছি। আর ইতোমধ্যে সেটাকে আইন হিসাবে আমরা আমাদের কেবিনেটে পাস করে দিয়েছি। সামনে পার্লামেন্টে সেটা চলে আসবে এবং সেটা আইন হিসাবে পাস হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জুন ২০২০ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আদালতসমূহে ৩৬ লক্ষ্য ৯৪ হাজার ৯০৮টা মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় প্রদানের উপায় বের করার জন্য আমি সকল বিচারক এবং আইনজীবী সকলের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। যে এই এত মামলা এভাবে যেন জমে না থাকে। আপনারা কিভাবে দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করা যায় অবশ্যই এব্যাপারে একটু আন্তরিক হবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।’
‘এই জন্য যদি কোনো রকমের কোন সহযোগিতা চান সরকারের পক্ষ থেকে সেটা আমরা নিশ্চিয়ই করবো। কিন্তু এতোগুলি মামলা এভাবে পড়ে থাকুক সেটা আমরা চাই না।’
‘খুব অল্প সময়ে, অল্প খরচে ভোগান্তিমুক্ত বিচারপ্রাপ্তি মানুষের অধিকার এবং বিচার বিভাগের ওপরে যদি এই দ্রুত সময়ে অল্প খরচে বিচার দিতে পারেন। তাহলে মানুষের একটা আস্থা বিশ্বাসও বাড়বে। যদিও আমাদের দেশের সকল মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আছে। তারপরও আমি বলবো, এব্যাপারে সবাই একটু এব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে।’