সংবিধানের সুফল বঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: স্পীকার
৫ নভেম্বর ২০২০ ০০:২৭
ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, ‘সংবিধান’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গভীর অনুভূতির ফসল। স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছেন বিশ্বসেরা অনন্য সংবিধান। এই সংবিধানের সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে সংবিধানে অনুসৃত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে সংবিধানের সুফল বঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই এই সংবিধান সকলের কাছে অর্থবহ হবে বলে উল্লেখ করেন স্পীকার।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ৪৯তম দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত “বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং ৭২ এর সংবিধান” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে আজ প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্পীকার এসব কথা বলেন। এ ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকবৃন্দের প্রশংসা করেন স্পীকার।
স্পীকার বলেন, ‘বাংলার মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সমাজ ও অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক মুক্তি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে আন্দোলন-সংগ্রাম, সেই আদর্শ-চিন্তা-দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে আমাদের সংবিধানে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাঙালি যখনই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েছে, তখনই এসেছে চরম আঘাত। তাই, সংবিধানের চারটি মৌলিক স্তম্ভ- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তিনিই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো ছিল তাঁর দর্শন।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘১২ অক্টোবর ১৯৭২ গণপরিষদে এবং ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সংবিধান প্রণয়নের দিনে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণ দুটোতে সমগ্র সংবিধান প্রণয়নের কাঠামো ও প্রেক্ষাপটের পরিপূর্ন প্রতিফলন রয়েছে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরের দিন ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ ‘প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার ১৯৭২’ প্রণয়ন করেন, যেখানে গণপরিষদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পরবর্তীতে, ৪ নভেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন যা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধু সংবিধান প্রণয়নের কাজটি করেছিলেন দ্রুততার সাথেই, কেননা দীর্ঘ সময় এদেশের মানুষ শাসনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে স্বাধীন বাংলার মাটিতে বসে বাঙালিকে সংবিধান উপহার দিতে পারার চেয়ে বেশি আনন্দের আর কিছু ছিল না।’
স্পীকার বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন সংবিধানের চারটি মৌলিক স্তম্ভের আলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন শোষণহীন সমাজ নির্মাণ করতে পারে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানের এই মূল ভিত্তিগুলোকে সামনে রেখেই একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বৈশ্বিক কোভিড মহামারির দুঃসময়েও আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাতে সক্ষম হয়েছি, দেশে খাদ্যের সংকট হয়নি এবংআমাদের সূচকগুলো এখনো ঊর্ধ্বমুখী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোভিডকে উত্তরণ করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যেভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, সে যাত্রা ও ধারা সুসংহতকরনে সকলকে অবিচল থাকার আহ্বান জানান স্পীকার।
খন্দকার আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও এডভোকেট আজহারুল্লাহ ভূইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান সিকদার, চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রকাশ রায়, হাসনাত ফারুক শিমুল রবিন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সমাজকর্মী সুচরিতা দেব মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ও বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।