স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর দু’টি বেসরকারি স্কুলে আকস্মিকভাবে ছাত্রদের বেতন বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলন করছে ছাত্রলীগ। স্কুলগুলো হচ্ছে চিটাগাং আইডিয়াল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুল।
ছাত্রলীগের চাপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে আইডিয়াল স্কুল। তারা বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। তবে সব নিয়ম সম্পন্ন করে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনড় রয়েছে এলিমেন্টারি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ এর আগেও নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত ভর্তি ফি ও বেতন নেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে, যার আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি।
চিটাগাং আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রত্যেকে শ্রেণিতে ২শ’ টাকা করে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এই খবর জানার পর মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতারা আইডিয়াল স্কুলে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন অভিভাবকও। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিদা নাসরিন শিউলির সঙ্গে দেখা করে বর্ধিত বেতন প্রত্যাহারের দাবি জানান। দুপুরে ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
নূরুল আজিম রণি সারাবাংলাকে বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা না করে এবং জেলা প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়ে হঠাৎ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছি, বেতন বাড়ানোর আগে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বছরের তিন মাস পর বেতন বাড়াচ্ছেন কেন? আদেশ প্রত্যাহার না করলে স্কুল ঘেরাও করব। প্রধান শিক্ষক তখন আদেশ প্রত্যাহার করে নেন।
সেখানে যাওয়া স্থানীয় সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মায়মুন উদ্দীন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ছাত্রলীগের চাপের মুখে প্রধান শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গেই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের যে কোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমরা আছি।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রধান শিক্ষক শাহিদা নাসরিন শিউলির মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এসময় অভিভাবকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ সোলায়মান, বাবুল চৌধুরী, আইয়ুব আলী, মো. রুবেল, মাজহারুল ইসলাম, মো. ফরহাদ। ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম, কাজী নাঈম, মায়মুন উদ্দীন মামুন, আব্দুল কাদের, মুজিবুর রহমান রাসেল, নোমান চৌধু্রী রাকিন।
এদিকে সোমবার (১২ মার্চ) নগরীর দামপাড়া এম এম আলী রোডে এলিমেন্টারি স্কুলে হঠাৎ বেতন বাড়ানোর প্রতিবাদে অভিভাবকদের বিক্ষোভেও সংহতি প্রকাশ করে নগর ছাত্রলীগ।
পাঁচটি ইউনিটে বিভক্ত স্কুলটির প্রত্যেক ক্লাসে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা বেতন বাড়ানো হয়। প্লে থেকে নার্সারি পর্যন্ত নতুনভাবে বেতন নির্ধারণ হয়েছে ৩ হাজার ২শ’ টাকা, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৩ হাজার ৩শ’ টাকা, পঞ্চম শ্রেণিতে ৩ হাজার ৪শ’ টাকা, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ৩ হাজার ৫শ’টাকা, অষ্টম শ্রেণিতে ৩ হাজার ৮শ’ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণির ৪ হাজার ২শ’ টাকা।
অভিভাবক ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা না বলে, আগে থেকে কোনো ঘোষণা না দিয়ে, আইন অনুসরণ না করে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা বিক্ষোভ করেছিলাম। আমরা সব অভিভাবককে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত বেতন না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। আমাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতারা এসে সংহতি জানিয়েছেন। তারা এই আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে।
তবে এলিমেন্টারি স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সিনিয়র সহকারী শিক্ষক জয় সেন।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, জেলা প্রশাসনের পরামর্শে জেলা শিক্ষা অফিসের অনুমতি নিয়ে বেতন বাড়ানো হয়েছে। এখানে আইন লঙ্ঘন করা হয়নি। অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আবারও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সুতরাং আমরা আপাতত এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখছি।
সারাবাংলা/আরডি/এটি