ঘুষ-দুর্নীতির ‘আখড়া’ নড়াইল সদরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস!
৬ নভেম্বর ২০২০ ০৮:০৮
নড়াইল: জেলা সদরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সরকারি এই কার্যালয়টি ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে— এমন পরিচিতিই ছড়িয়েছে জেলার সবখানে! ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান এর বিপরীতে। ফলে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন!
ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির পেছনে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার মো. সাহাজান মোল্লা। তার সঙ্গে রয়েছেন হেড ক্লার্ক ছরোয়ার মল্লিক। তারা দু’জনে মিলে অন্য অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রতিদিনই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের মাধ্যমে বেআইনিভাবে জমি রেজিস্ট্রি করে অনেকেই জমির মালিক হয়েছেন।
এদিকে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ছাড়াও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় দলিল লেখকদের একটি চক্র। প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় ব্যক্তিরা জমিজমা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নিয়ে এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা।
দলিল করতে আসা ভুক্তভোগীরা জানান, নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রারসহ তার অনুসারী এবং দালালরা নানা ধরনের জাল-জালিয়াতিতে জড়িত। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বালাম টেম্পারিং ও পাতা ছিড়ে ফেলার মতো অভিযোগ রয়েছে অফিসের রেকর্ডরক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথও করে দিয়ে থাকেন কেউ কেউ। জানা গেছে, সাফ-কবলা দলিলের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ হারে রাজস্ব নেওয়ার কথা থাকলেও দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মি করে প্রতি লাখে ১৭ শতাংশ হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকায় দলিল লেখক সমিতির দ্বারা পরিচালিত একটি চক্র রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দলিল দাতা-গ্রহীতাদের কাছ থেকে দলিলের টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকির মতোও অভিযোগ রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে।’
সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের বাইরেও অনেক মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে আশপাশে। ভুক্তভোগীরা জানান, বাইরে ঘুরতে থাকা বেশিরভাগ লোকই দালাল চক্রের সদস্য। অনেক সময় তাদের কারও সঙ্গে কথা না বলে অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখাই পাওয়া যায় না!
অভিযোগের বিষয়ে হেডক্লার্ক ছরোয়ার মল্লিক বলেন, ‘আমি সাব রেজিস্টার স্যারের নির্দেশে সব কাজ করি। আমি আর কিছু বলতে পারবো না। আপনারা স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন।’
নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো. সাহাজান মোল্লাকে একধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া অভিযোগের বিষয় জানিয়ে ‘এসএমএস’ পাঠানোর পরও তিনি উত্তর দেননি।