বিশেষ অধিবেশন বসছে কাল, পাস হবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল
৭ নভেম্বর ২০২০ ১৭:২৮
ঢাকা: আগামীকাল রোববার (৮ নভেম্বর) শুরু হবে দশম জাতীয় সংসদের দশম (বিশেষ) অধিবেশন। বিশেষ এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন এ জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্ততিও। অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হবার কথা রয়েছ।
এদিকে অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা আয়োজন চলছে। নতুন সাজে সাজানো চলছে পুরো সংসদ ভবন এলাকা। লেকে ভাসানো হয়েছে পালতোলা নৌকা।
সংসদ সচিবালয় থেকে জানাগেছে, আগামী কাল ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ-২০২০) উপলক্ষে এই অধিবেশনকে বিশেষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
অধিবেশনের প্রথম দিনে শোক প্রস্তাব ও অধ্যাদেশ উত্থাপন করা হবে। পরদিন ৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। ওইদিন অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার পর তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা পাস হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ অধিবেশন বসবে। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর স্মারক বক্তব্য রখেবেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ওপর সাধারণ আলোচনায় হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশি অতিথিরা না থাকলেও অধিবেশনকে স্মরণীয় করে রাখতে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা চলছে। সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টার ও মেডিকেল সেন্টার এই পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। করোনা নেগেটিভ ব্যক্তিরাই বিশেষ অধিবেশনে প্রবেশ করতে পারবেন। করোনাকালীন বিগত তিনটি অধিবেশনের মতো আগামী অধিবেশনেও সংসদ সদস্যরা রোস্টারভিত্তিতে অংশ নিবেন। তবে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার দিন ৯ নভেম্বর করোনা নেগেটিভ সকল সংসদ সদস্য অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন।
এদিন প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিদেশী কুটনীতিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সমাজের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত থাকবেন।
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিস্টরা জানায়, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকার যেখানে বসেন, তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টানানো হয়েছে। সংসদ ভবনের লেকে ভাসানো হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পাল তোলা দু’টি নৌকা। দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক এই নৌকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। সংসদ লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ বাণী নিয়ে আলো-ছায়ার দৃষ্টিনন্দন কোলাজ করা হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় প্যাণ্ডেল করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিলে পাকিস্তানের গণপরিষদ, স্বাধীন দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদে বঙ্গবন্ধুর কাজগুলো ফোকাস করা হবে। একটি রাষ্ট্রের জন্ম, সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু যা কিছু করেছেন তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বক্তব্যও বাজানো হবে। এছাড়া সংসদ ভবনের ভিতরে-বাইরে নানা ধরণের বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এই অধিবেশনে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করেন। এরআগে ১২ অক্টোবর অধ্যাদেশটি মন্ত্রীসভায় অনুমোদন হয়। দেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার পর জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিদ্যমান আইনের একটি ধারা সংশোধন করে ধর্ষণে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়। ২০০০ সালের ৮নং আইনের ধারা ৯ এর সংশোধনে জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়, ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করতে ৩০দিনের মধ্যে সংসদে বিল উত্থাপন ও তা পাস করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদে ১১টি বিল পাস ও উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ ছাড়াও ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) বিল-২০২০’ রয়েছে। গত ৩০ আগস্ট মন্ত্রীসভার বৈঠকে ওই বিলটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ইয়াবার উৎপাদন, পরিবহন, বিপণনের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮’ পাস হয়। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২২ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন (সপ্তম অধিবেশন) আহ্বান করা হলেও দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় তা স্থগিত করেন রাষ্ট্রপতি। করনো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ নতুন করে অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আগামী ৯ থেকে ১২ নভেম্বর বিশেষ কার্যক্রম চললেও বাকি দিনগুলো সাধারণ কার্যক্রম চলবে। আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত অধিবেশন চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অধিবেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো শৈথিলতা দেখানো হবে না। অধিবেশনের আলোচনা, সাজসজ্জা ও প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দর্শন, রাজনৈতিক জীবন এবং সর্বপরি মহান এই নেতার বর্ণাঢ্য জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হবে। চারদিনের বিশেষ আলোচনা শেষে পরে অধিবেশনের সাধারণ কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি জানান।