৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি, মি. বেকারের বিরুদ্ধে মামলা
৮ নভেম্বর ২০২০ ২১:৪১
ঢাকা: পেস্ট্রি শপ মি. বেকার বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ অভিযোগে মি. বেকারের বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা মামলা দায়ের করেছে।
ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান রোববার (৮ নভেম্বর) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মি. বেকারের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করে ৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে বিক্রির প্রকৃত তথ্য গোপন করায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন- মি. বেকারের ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি, ব্যাংক হিসাব তলব
ড. মইনুল খান জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ‘মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেডে’র তুরাগে অবস্থিত কারখানা-কাম-প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যার মাধ্যমে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে থাকে। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের হিসাব সংরক্ষণ না করেই ব্যবসা চালাচ্ছে। পরে অনুসন্ধানের স্বার্থে টঙ্গী এলাকায় তাদের নামে খোলা দু’টি ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। এতে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং এগুলো পর্যালাচনায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসে।
এর আগে, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকারের বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। এই অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরে চেয়ারম্যান অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠান দু’টিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিল দেখাতে বলা হলে সেটিও উপস্থিত মালিকপক্ষ দেখাতে পারেননি। এসব বিষয়ে কোনো সদুত্তরও তারা দিতে পারেনি।
ভ্যাট গোয়েন্দা দল মি. বেকারের বিভিন্ন নথি জব্দ করে সেগুলো পর্যালোচনা করে জানতে পারে— ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে কেবল বিক্রির তথ্য গোপন করে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই ভ্যাটের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯১ টাকা সুদ প্রযোজ্য। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ৮০ কোটি টাকা।
ভ্যাট গোয়েন্দা আরও জানায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে জব্দ করা ক্রয় চালান পরীক্ষা করে কাঁচামাল কেনার ওপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৮ টাকা পাওয়া যায়। এর ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৩৪ হাজার ৬৭৯ টাকা প্রযোজ্য। অন্যদিকে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন শোরুমের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর অপরিশোধিত ভ্যাট ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪০ টাকা, যার ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য ৯৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৪ টাকা। এছাড়া ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের ওপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১০ কোটি ২০ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৩ টাকা, যার ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৭ কোটি ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ১৪১ টাকা প্রযোজ্য।
ভ্যাট গোয়েন্দা আরও জানায়, মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও উৎসে কর্তন বাবদ সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাট ৪৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৫৩১ টাকা উদঘাটন করা হয়েছে। এই অপরিশোধিত মূসকের ওপর সুদ ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৭২৫ টাকা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
পেস্ট্রি শপ বিক্রির তথ্য গোপন ভ্যাট গোয়েন্দা ভ্যাট ফাঁকি মামলা মি. বেকার