Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিরোধী দলের কথা আগে শুনতে হবে— বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রপতি


৯ নভেম্বর ২০২০ ২০:০১

ফাইল ছবি: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

ঢাকা: জাতীয় সংসদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে সবকিছুর ঊর্ধ্বের এক অনুভূতি হিসেবে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদকে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভূমিকারও আকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সবসময় সংসদে বিরোধী দলের বক্তব্য শুনতে আগ্রহী ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (৯ নভেম্বর) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদাভাবে করে দেখার সুযোগ নেই’

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু সংসদ কার্যকর করার উদ্যোগ নেন জানিয়ে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই পুনর্গঠন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে সংসদকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালের ২২ মার্চ রাষ্ট্রপতির ২২ নম্বর আদেশবলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদ গঠন করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম ‘গণপরিষদ’ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা এই পরিষদের সদস্য হিসাবে শপথ নেন।

গণপরিষদে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপরিষদের প্রধান দায়িত্ব ছিল দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা। কনিষ্ঠ ও নবীন সদস্য হিসেবে গণপরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ ছিল আমার জন্য খুবই আগ্রহ ও আকর্ষণের। নিতান্ত নবীন সদস্য হিসাবে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সদস্যদের কর্মকাণ্ড খুবই আগ্রহভরে প্রত্যক্ষ করতাম। পার্লামেন্টারিয়ান বঙ্গবন্ধু তখন ছিলেন আমার আগ্রহের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন। গণপরিষদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা ১০-এ উন্নীত হয়নি। কিন্তু বিরোধী সদস্যরা প্রতিবাদমুখর ছিলেন, দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেন। সংসদ অধিবেশন হতো প্রাণবন্ত। যুক্তিতর্ক ও মতামত উপস্থাপন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল সংসদে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ও তার ভাষণ।

সংসদে বিরোধীদের বঙ্গবন্ধু গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সেই সময়কার ন্যাপ থেকে নির্বাচিত ও পরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে ন্যাপ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সবসময়ই তিনি সুযোগ পেতেন। স্পিকার মাঝে মাঝে তাকে মাইক দিতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘ওকে সুযোগ দেন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে’।

সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শুধু যে আমাদের দলীয় সদস্য থেকে কমিটি করব তা নয়। দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে, জনগণকে যেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সংবিধান দেওয়া যায়, এই উদ্দেশ্যে সকলের মতামত চাইব, এই সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে, যে অধিকার মানুষ চিরজীবন ভোগ করতে পারবে।’

স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবদুল হামিদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সংসদের সব কার্যক্রমে বিরোধী সদস্যদের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। রুলস অব প্রসিডিওরের খসড়ার ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টিই একেবারে সবকিছু চূড়ান্ত করে নাই। দুই-একজন যারা নির্দলীয় বা বিরোধী পার্টি যাই বলুন, আমার কোনো আপত্তি নাই। যদি আপনাদের ভালো কোনো সংশোধনী থাকে, তা নিশ্চয়ই দেশের মঙ্গলের জন্য মনকে আমরা বড় করে তা গ্রহণ করব।

বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথা তুলে ধরে সেই সময়কার আইনপ্রণেতা আবদুল হামিদ বলেন, ‘সংসদে আরও একটা বিষয় ছিল লক্ষ্যণীয়, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। উদার না হলে, গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন না হলে এটা ভাবাই যেত না। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এম এন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনও দেখেছি তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন। প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। বিরোধী দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আলাদা একটা মনোযোগ ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধু কখনো বিরোধী দলের নেতাদের কটাক্ষ করে কিছু বলতেন না বরং তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। রাজনৈতিক শিষ্টাচার তার জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, আপামর জনগণের আর্থিক সহায়তার জন্য চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দেশের ১০০টি উপজেলায় পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে। সারাদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব।

রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যখন এভাবে কাজ করে তখন জাতির উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টপ নিউজ মুজিববর্ষ মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদ অধিবেশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর