যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিন: ফখরুল
১০ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৩০
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ আহ্বান জানান।
ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তুলে ধরার জন্য এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ সরকার, তারা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে গণতন্ত্রকে ধবংস করে ফেলেছে, গণতন্ত্রের সব সম্ভাবনাকে ধবংস করে ফেলেছে। কিন্তু এটা শেষ নয়। তাদের আজকে দেখা উচিত, তাদের এই নির্বাচন (যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন) থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত-নির্বাচন কমিশন কাকে বলে?’
আমেরিকার নির্বাচনে যারা অথোরেটি সমস্ত চাপের মুখেও তারা অবিচল থেকেছে। অবিচল থেকে তারা জনগণের যে রায় সেটাকে আপহোল্ড করেছে-দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি, এটাই গণতন্ত্র’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যদি না থাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, শক্তিশালী হতে হবে, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ শক্তিশালী হতে হবে, প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) দেখা উচিত কীভাবে আমেরিকাতে আত্মম্ভরিতার অবসান ঘটানো হয়েছে, জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করছেনে, আমেরিকার জনগণ অনেকে কাঁদছে যে, তারা একটা ভয়ংকর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, সারা পৃথিবীর মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।’
‘এর একমাত্র কারণ কর্তৃত্ববাদীতার যে চাপ, যে অসহায়ত্ব সেখান থেকে তারা (আমেরিকান), গোটা পৃথিবীর মানুষ বেরিয়ে আসতে চায়। আজকে সেজন্য আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দিয়ে আর সম্ভব না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকার অন্ধকার গহ্বরে আছে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) তো অন্ধকারে আছেন। দেখতে পারছেন না আপনার চারদিকে কি অবস্থা, মানুষের মধ্যে কি চলছে, তাদের চোখের ভাষা আপনারা পড়তে পারছেন না, দেয়ালের লিখন আপনারা দেখতে পারছেন না। আপনারা সেই অন্ধকার গহ্বরের মধ্যে বাস করছেন। সেই সাথে দেশ ও জাতিকে টেনে নিয়ে গেছেন ওই অন্ধকার গহ্বরের দিকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই গহ্বর থেকে আমরা স্বপ্ন দেখাতে চাই। আমরা সূর্যের আলো দেখাতে চাই। আসুন, আমরা সবাই মিলে সেই চেষ্টা করি। আমার আহ্বান থাকবে এই নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।’
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটি ধবংস হয়ে গেছে। এখানে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, এখানে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। কোনো চাকরি হয় না- ডিএনএ টেস্ট না করে। অর্থাৎ বিএনপির কোনো গন্ধ থাকলে তার চাকরি হয় না। অন্য সব জায়গাতে ঘটছে, সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা এখন পর্যন্ত চলছে। আনওয়ানটেড, আনফুরচুনেড ইনসিডেন্ট।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার, আমরা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছি। কারণ, এদেশ গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন হয়েছে। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফিরে পাবার জন্য আমরা যে আন্দোলন করছি সেই আন্দোলন স্তমিত করতে আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি, এক লাখের ওপরে গ্রেফতার, আমাদের বহু নেতা গুম হয়ে গেছেন, খুন হয়ে গেছেন। এত কিছু ত্যাগ শুধু গণতন্ত্রের জন্য।
ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ উপনির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত রাতেও উত্তরায় তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) আমাদের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গেছে, দক্ষিণখান থানা বিএনপির সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাগরের বাড়িতে গিয়ে এক পুলিশ অফিসার পিস্তল ধরে তার স্ত্রীকে বলেছেন, তাকে বলবেন যে, সে যেন বাড়ি না আসে তানাহলে গুলি করে মেরে ফেলব। একটু আগে খবর পেলাম, অফিসের পিয়নকে ধরে নিয়ে আবার ছেড়ে দিয়েছে। এরকম ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করার পরও হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার করছে।’
তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে প্রার্থীকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয় না । তিন দিন আটকিয়ে রখেছে। তারপরে অনেক চেষ্টা করে বের হয়েছে। এখন তাকে বের হতে দেয় না। ওখানে তো মহাশক্তিশালী, প্রভাবশালী প্রয়াত নাসিম (মোহাম্মদ নাসিম) সাহেবের ছেলে নির্বাচন করছে, তারা তো ওখানে কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষের উপ-নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
