নূর হোসেনের আশা পূরণ হয়নি: জি এম কাদের
১০ নভেম্বর ২০২০ ১৮:১৮
ঢাকা: শহীদ নূর হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, ‘যে আশা নিয়ে নূর হোসেন আত্মদান করেছেন, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। নূর হোসেন হয়তো চেয়েছিল পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের গণতন্ত্রের চেয়ে আরও ভালো গণতন্ত্র পাবে দেশ। আজও কি গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে?’
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের তার বনানী কার্যালয়ে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা হস্থান্তর করেন। কিন্তু ৯১ সালের নির্বাচনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। সংবিধানের ৭০ ধারা সংসদীয় পদ্ধতির মূল স্বাদ নষ্ট করেছে। ৭০ ধারা অনুযায়ী সরকার দলীয় সদস্যরা সরকারি দলের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে দল সরকার গঠন করে, সেই দলের প্রধানই সংসদীয় দলের নেতা এবং সরকার প্রধান হন। সরকার প্রধান যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই বাস্তবায়ন হয়। এতে এক নায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ফলে, স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক না হয়ে স্বৈরতন্ত্র মুক্তি পাক ও গণতন্ত্র নিপাত যাক হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না এমন প্রশ্নও রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।’
কাদের বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে সংবিধান থেকে ৭০ ধারা তুলে দিতে হবে। সংসদীয় পদ্ধতিতে সংসদের কাছে সরকার ও সরকার প্রধানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে সংসদ। কিন্তু ৭০ ধারার কারণে উল্টো হয়েছে, সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।’
এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের তন্ত্র। এতে জনগণের শাসন নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুল করে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুল মানুষকে নির্বাচিত করেনি। প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হলে রাষ্ট্রের সকল স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে দেশে সুশাসন নিশ্চিত হবে যাতে সামাজিক ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। প্রতিবছর গণতন্ত্র দিবসে এই হবে আমাদের অঙ্গীকার।’
গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ সোনার হরিণ, গণতন্ত্র আজ খাঁচায় বন্দি। জাতীয় পার্টিই পারবে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন কী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে? সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১০ ভাগ। যেখানে ৯০ ভাগ ভোটারই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি। আবার আরেকটি আসনে ভোট পড়েছে মাত্র দুই ভাগ।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে। আগামী নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার সরকার গঠন করবে।’
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ টি ইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম, আজম খান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. হারুন আর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. আব্দুস সালাম, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, মোস্তফা আল মাহমুদ, ইয়াহ্ ইয়া চৌধুরী, মৌলভী মো. ইলিয়াস, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, আব্দুল হামিদ ভাসানী, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন তাপস, মো. বেলাল হোসেন, এ কে এম আশরাফুজ্জামান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, এনাম জয়নাল আবেদীন, মো. হুমায়ুন খান, মো. আনিস উর রহমান খোকন, মাখন সরকার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুলতান মাহমুদ, এম এ রাজ্জাক খান, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া ও ডা. মো. মোস্তাফিজার রহমান আকাশসহ অনেকে।