গবেষকদের হাত ধরে ফিরছে মীর কাদিমের গরু
১১ নভেম্বর ২০২০ ০৮:৩২
সাভার: গবেষকদের হাত ধরে আবারও ফিরছে মুন্সিগঞ্জের বিলুপ্তপ্রায় মীর কাদিম জাতের গরু। অনন্য এই জাতের গরু ইতিবাচকভাবে বদলে দেবে দেশের প্রাণিসম্পদের চেহারা— এমনটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই)। তবে কীভাবে বদলে যাবে চেহারা? সে গল্পই শোনালেন বিএলআরআই’র মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার।
মীর কাদিম জাতের গরুর সম্ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে পিওর মীর কাদিম জাতের বেশকিছু গরু সংগ্রহ করে তার ভেতর থেকে উৎকৃষ্ট মানের ষাঁড় ও গাভী বাছাই করা হয়। এ জাতের গাভীর দুধের উৎপাদনশীলতা অনেক বেশি। ষাঁড় থেকে ‘সিমেন’ অর্থাৎ বীজ বা শুক্রাণু সংগ্রহ করে গবেষণার মাধ্যমে গরুর উন্নত জাত তুলে আনছি আমরা।’
ড. নাথু রাম সরকার বলেন, ‘এই জাতের গরু সহিষ্ণু এবং এর উৎপাদনশীলতা অতুলনীয়। অন্য দেশি জাতের গাভী থেকে যেখানে ৫ থেকে ৮টি বাচ্চা পাওয়া যায় সেখানে এই জাতের গাভী থেকে বাচ্চা মেলে ১২ থেকে ১৪টি। এভাবে দ্বিগুণ উৎপাদনশীলতা আমাদের দ্রুত সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারবে। দেশের পুষ্টি আর আমিষের ঘাটতি পূরণে অসাধারণ ভূমিকা রাখবে।’
চার বছরের বেশি সময় ধরে এই জাতের গরু নিয়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে গরুর এই জাত নিয়ে গবেষণা করছেন বিএলআরআই’র মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রাণী উৎপাদন গবেষণা বিভাগ) ড. আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছি আগের দিনে নবাব আর জমিদাররা তাদের সন্তানদের মুখে তুলে দিতেন মীর কাদিম জাতের গরুর দুধ। কারণ ওই দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ অনেক বেশি, যা শিশুদের মেধা বিকাশের অনন্য উপাদান। আমরা বেশি পরিমাণ দুধের আশায় যেখানে-সেখানে গরুর শংকরায়ন করে মূল ঐতিহ্যই হারিয়ে ফেলেছি।’ অথচ এই জাতের গরুর যে উৎপাদনশীলতা তা দিয়েই প্রাণিসম্পদ দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করেন ড. আব্দুল জলিল।
তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জের মীর কাদিম জাতের গরু দেখতে ধবধবে সাদা। কিছুটা লালচে আর আকর্ষণীয় বাঁকা শিং। বাজারে এই গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে। তবে চাহিদার তুলনায় এই জাতের গরুর সরবরাহ কমে গেছে।
ড. জলিল বলেন, ‘আমরা মুন্সিগঞ্জে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করেছি। সাফল্যও এসেছে। এখন প্রয়োজন দেশজুড়ে এই জাতের গরু ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের প্রাণিসম্পদের চিত্র পাল্টে দেওয়ার জন্যে এই জাতের গরুই যথেষ্ট। সব মিলিয়ে মীর কাদিমের গরু কেবল ঐহিত্যের ধারকই নয়, সম্ভাবনা আর উৎকর্ষের বিচারেও সর্বোৎকৃষ্ট।’
গবেষেক ড. নাথু রাম সরকার বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট মীর কাদিমের গরু মুন্সিগঞ্জ