Sunday 06 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এক্কান সমস্যাত পড়ি আঁর স্বামী ডাকাত হইয়্যা ঘুরের দে’


১২ নভেম্বর ২০২০ ১৩:৫৮ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ১৪:০০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে: ‘আঁর স্বামী ক্ষেত-খামারে কাজ গরিয়েরে (করে) আরাগো (আমাদের) সংসার চালাইতো। দুই পোলা এক মাইয়্যা পোয়া নিয়ে সংসারও ভালাই চলছিল। কিন্তু এক্কান সমস্যাত (একটা সমস্যা) পড়ি গিয়েরে (গিয়ে) বিপদে পড়ি যার গোই আঁর স্বামী। হয়েছে কি, কিছুদিন আগে আঁরার (আমাদের) দেবর মারা গিয়ে দে (মারা গিয়েছে), ওই ঘটনায় আঁর স্বামীরে প্রভাবশালীরা হয়রানি করছিল। ওইডা থেকে বাঁচবার যাইয়্যাই অন ডাকাত হইয়্যা ঘুরের দে আঁর স্বামী’-বলছিলেন সুফিয়া আক্তার।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রামে ও কক্সবাজার এলাকার জলদস্যূ বাহিনীর ৩৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

বিজ্ঞাপন

এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দস্যুবাহিনীর স্বজনরা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। সেখানেই সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন সুফিয়া আক্তার।

তিনি জানান, তার স্বামী ক্ষেতে খামারে কাজ করে সংসার চালাতো। কিন্তু দেড় বছর আগে তার দেবর খুন হয়। সে খুনের ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার স্বামীকে জড়িয়ে মামলা দেয়। সে মামলা থেকে বাঁচতে কয়েকদিন পালিয়ে বেড়ায় তার স্বামী। কিন্তু পালিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় তার স্বামী জড়িয়ে যায় দস্যু বাহিনীর সঙ্গে। এরপর তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলাও জড়িয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাধ্যমে আশ্বাস পান, যদি তার স্বামী আত্মসমর্পণ করে তবে তাকে গ্রেফতার করা হবে না। এ কথা সুফিয়া তার স্বামীকে ফোনে জানালে তার স্বামী এই প্রস্তাবে রাজি হয় এবং আজকে আত্মসমর্পনণ করেন।

সুফিয়া আক্তার জানান, আজকে থেকে তার স্বামী কোনো খারাপ-অন্যায় কাজে জড়িত হবে না। এ জন্য যা কিছু করা দরকার সবই তিনি করবেন। আর যদি আজকের পর ফের অন্যায় কাজে জড়িয়ে যায় তবে তিনি নিজেই স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তু্লে দেবেন বলেও আশ্বাস দেন।

একই কথা বললেন অপর এক দস্যু সদস্যের বাবা রিয়াজ উদ্দিন। তিনি জানান, তার ছেলেও প্রভাবশালীদের অত্যাচারের শিকার হয়ে একটা পর্যায়ে জলদস্যুতায় জড়িয়ে পড়ে। মূলত রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন ধারার হওয়ায় তার ছেলের ঘর-বাড়ি দখল করে নিতে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় একাধিক মামলা। এসব মামলা থেকে বাঁচতেই তার ছেলে জলদস্যুতায় জড়িয়ে পড়ে পালিয়ে বেড়াতো। কিন্তু যখনি প্রস্তাব পেল আত্মসমর্পণ করলে হয়রানি থেকে বাঁচতে পারবে তখনি তার ছেলে রাজি হয় এবং আত্মসমর্পণ করেন বলে জানান রিয়াজ উদ্দিন।

তিনি জানান, আজ থেকে আমার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালাম পড়বে। বাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে সংসার করবে। কোনো অন্যায় কাজে জড়াবে না বলে ওয়াদা করেছে। তাই রিয়াজ উদ্দিনের প্রত্যাশা, যদি প্রভাবশালীরা হয়রানি না করে তবে আজ যারা আত্মসমর্পণ করেছে তারা আর অন্যায় কাজে জড়াবে না।

শুধু সুফিয়া আক্তার কিংবা রিয়াজ উদ্দিন নয়। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আগত সুফিয়া কিংবা রিয়াজ উদ্দিনের মতো অন্যান্য স্বজনদেরও একই প্রত্যাশা, স্থানীয় প্রভাবশালীরা যেন তাদেরকে হয়রানি না করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, আজকে যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদেরকে কেউ যাতে হয়রানি করতে না পারে সেজন্য সকল ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে শুধু হত্যা এবং ধর্ষণ ছাড়া আর যত মামলা আছে সেসব থেকে তারা খালাস পেয়ে যাবে। বাকি মামলাগুলোতে আইনি প্রক্রিয়ায় তারা ন্যায়-বিচার পাবেন।

আত্মসমর্পণ জলদস্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর