বেগম মুজিবের ২ সিদ্ধান্ত ইতিহাসের মাইলফলক: আমু
১২ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৫৩
ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও ইতিহাসের বাঁক বদলের সন্ধিক্ষণ একাত্তরে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। স্বাধীনতার অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে বেগম মুজিবের অন্তত দু’টি সিদ্ধান্ত ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আমির হোসে আমু বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগও সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ব্গেম মুজিব সেই সিদ্ধান্ত মানেননি। পরে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের আগেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল— ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন কি না। সে সময় বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন— বঙ্গবন্ধু যেন তার মনের কথা শোনেন। এই দু’টি সিদ্ধান্তই ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে— মন্তব্য আমুর।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু নিয়ে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর সব সিদ্ধান্ত বেগম মুজিব আমাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তিনি আমাদের আর্থিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতেন। আন্দোলন-সংগ্রামের পরামর্শ দিতেন। আগরতলা মামলা হওয়ার পর তিনি (বেগম মুজিব) আমাদের বলেছেন, তোমরা ঘাবড়িও না, তোমাদের নেতা ঘাবড়াই নাই। তিনি বলেছেন, তিনি মুক্ত মানুষের মতো ফিরে আসবেন।
ওই মামলায় বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে আমু বলেন, ওই সময় বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি প্যারোল মেনে নিয়েছিল। সেই মিটিং হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বসে। কিন্তু বেগম মুজিব এর বিরোধিতা করলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা হতে পারে না। মুক্ত মানুষ হিসেবে ৩৫ জন সহকর্মী নিয়ে মাথা উঁচু করে বের হতে হবে। পরে সেভাবেই বঙ্গবন্ধু বের হয়ে এসেছিলেন।
৭ মার্চের ভাষণের ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে আমু বলেন, ওই ভাষণ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন। অনেকেই অনেক কিছু লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম মুজিব বলেছিলেন, তুমি কারও কথায় কান দিবা না। তুমি এত দিন যে বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করেছ, তোমার মন যেটা বলে, সেটাই তুমি বলবা। তাতে যা হয় হবে।
আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে বাধা দেওয়া এবং ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ— এই দুইটি ঘটনায় বেগম মুজিবের সিদ্ধান্তের ওপর বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক কিছু নির্ভর করেছে। এই দু’টি সিদ্ধান্ত আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে আমির হোসেন আমু বলেন, পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়ন অকথ্য ভাষায় গালাগলি করছে। তারা বলেছে— পাক-ভারত যুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নাই, বক্তব্য নাই, ইত্তেফাকের কোনো লেখা নাই, আওয়ামী লীগ দালাল, দালালি করছে। এই অবস্থায় আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলাম। তাকে সবকিছু বলার পর তিনি (বঙ্গবন্ধু) অট্টহাসি দিয়ে বললেন, যুদ্ধের পর আমি এমন জিনিস দেবো যে তোমরা মজা পাবে, ওরা পালাবে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেকক্ষণ তর্কবিতর্ক করে বললেন— ঠিক আছে। আমার একজন পাকিস্তানি আওয়ামী লীগ আছে, তাকে দিয়ে একটা স্টেটমেন্ট দেওয়াই। তিনি তখন শাহ আজিজ সাহেবকে ফোন করলেন। শাহ আজিজ তখন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমরা বললাম ইত্তেফাকের কথা। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন— আমি জানি না। মানিক ভাইয়ের কাছে যা। আমরা মানিক ভাইয়ের কাছে গেলাম। তিনি বললেন, মজিবর মিয়া যেভাবে চলছেন সেভাবেই চলবে। এভাবে কথার অনেক পর রাজি হলেন। পরদিন দুই লাইন লিখেছিলেন। সেই দিন থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রস্তুতি নিয়ে ধাপে ধাপে এবং সত্যিকার অর্থে যুদ্ধের পরেই তিনি ৬ দফা দিলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু ৬ দফা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ঝটিকা সফর শুরু করলেন। ৬ দফা নিয়ে যেখানে মিটিং করেছেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়। সবশেষ নারায়ণগঞ্জে মিটিং করে আসার পথে গ্রেফতার করা হয়। দুই বছর কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের সবাইকে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন।
আমির হোসেন আমু বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিব মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশন শেখ ফজিলাতুন্নে মুজিব সংসদে আলোচনা