চলনবিলে অবাধে চলছে পাখি শিকার
১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৮:১৪
সিরাজগঞ্জ: চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাখি নিধন চলছে। সৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক, বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি শিকার করছেন। এতে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমিতেও ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে।
রাজশাহী বিভাগের পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার নয়টি উপজেলার সমন্বয়ে চলনবিল অঞ্চল বিস্তৃত। চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১৪টি নদী ও ২২টি ছোট-বড় বিল। নিম্ন জলাভূমিতে এ মৌসুমে পানি শুকিয়ে আসায় খাবারের সন্ধানে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও অতিথি পাখি এসে ভিড় জমায়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উপজেলা সদর থেকে দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাখি কেনা-বেচা হচ্ছে। ফলে এই এলাকাতে শিকারিদের আনাগোনাও বেশি। আর এসব দুর্গম এলাকাতে প্রশাসনের কোনো লোকজনও তেমন আসেন না।
তাড়াশ পৌর সদর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা গাজী ইউসুফ খন্দকার জানান, অল্প পানিতে খাবার সংগ্রহের জন্য এ বছরও চলনবিলে দেশি ও অতিথি পাখি এসেছে। সেই সঙ্গে প্রচুর মাছও দেখা যাচ্ছে। ফলে ঝাঁকে ঝাঁকে চখাচখি, পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, শর্লি, পিঁয়াজখেকো, ত্রিশূল, বাটুইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাঁদোখোচা, ফেফি, ডাহুক, গোয়াল, শামুখখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি বসতে শুরু করেছে। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির সৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারি বন্দুক, বিষটোপ, কারেন্ট জাল ও ফাঁদ পেতে প্রতিনিয়ত পাখি শিকার করছে। প্রকাশ্যে এসব পাখি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পেশাদার পাখি শিকারি বলেন, ‘বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই কোনোমতে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। প্রতি জোড়া পাখি প্রজাতি ভেদে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। ফলে বেশি লাভের আসায় অনেকেই মাছ ধরা বাদ দিয়ে পাখি শিকার করছেন।’
‘দি বার্ড সেফটি হাউস’ এর চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘পাখি শিকার জীববৈচিত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু পাখি নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষায় যে যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।’
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল করিম জানান, পাখি শিকার এবং কেনাবেচা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।