Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাওনা দাবিতে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ড্রাগন সোয়েটারের মালিক


১৫ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৩৫

ঢাকা: শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পরও ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করায় ড্রাগন সোয়েটারের মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল কারখানাটির পাওনা বঞ্চিত শ্রমিকরা। রোববার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর শ্রম ভবনে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনি অবরুদ্ধ থাকেন। কারখানাটির পাওনা বঞ্চিত শ্রমিকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। পাওনার বিষয়টি সুরাহা করতে আগামী বুধবার (১৮ নভেম্বর) ফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

কারখানাটির শ্রমিক আব্দুল কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুক্তি মেনে প্রথম কিস্তি পরিশোধ না করায় আমরা শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি কারখানার মালিককে রোববার শ্রম ভবনে হাজির হয়ে চুক্তি অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি উপস্থিত হয়ে কর্মকর্তাদের পাওনা পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানান। সেসময় উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বিজেএমইএ’র সাবেক নেতা কাজী মনিরুজ্জামান। বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি জানান, কর্মকর্তারা শ্রমিক নন। অথচ প্রথম দিকের মিটিংয়ে তিনি ছিলেন না। চুক্তিতে সবার কথাই উল্লেখ আছে। চুক্তি অনুযায়ী পাওনা না দেওয়ায় আমরা কারখানাটির মালিকসসহ শ্রম ভবন ৬ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখি।’

এই শ্রমিক আরও বলেন, ‘আমরা ৬ মাস অপেক্ষা করেছি। এখন তারা আবার বৈঠক করে কর্মকর্তার বিষয়টি সুরুহা করতে চান। আমরা তা মেনে নিইনি। কিন্তু পরে পুলিশের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয় আবারও আগামী বুধবার বৈঠক হবে।’

জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘৭ নভেম্বর যেদিন প্রথম কিস্তিু পরিশোধ করার কথা ছিল ড্রাগনের মালিক সেদিন টাকা নিয়ে রেডি ছিলেন। কিন্তু কারখানার কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তার জন্যে শ্রমিকদের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মকর্তারা শ্রমিক নন। কিন্তু চুক্তিতে তা উল্লেখ ছিল। শ্রমিকদের চাপে এবং প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা মিটিং করে অনেকটা বাধ্য হয়েই ড্রাগনের মালিক ওই চুক্তিতে সই করেছিলেন। কিন্তু তিনি তখনও জানতেন না চুক্তিতে কর্মকর্তাদের কথাও উল্লেখ আছে। কারণ সেখানে শুধু শ্রমিকদের কথাই আলোচনা হয়েছিল।’

রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রম ভবনে বিকেলে বৈঠক ছিল। বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি ছিল- দেড় কোটি টাকা দিতে হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ বলছে ৮০ লাখ টাকা দেবে। এ নিয়ে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় উভয়পক্ষ। তাই আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় চেয়েছে উভয়পক্ষ। বুধবারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শ্রমিকদের দাবি, পাওনার প্রায় ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েও যে শর্তে চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা, সেই অর্থের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ দিতে চান বিতর্কিত এই কারখানার মালিক। শুধু তাই নয়, বকেয়া পাওনার দাবিতে যে ৫০০ শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে সেই পাওনাদারের তালিকা থেকে ৩০০ শ্রমিককে বাদ দেওয়া হয়েছে! এছাড়া করপোরেট শাখার ১০ জন শ্রমিকের কোন পাওনা নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।

রাজধানীর মালিবাগে অবস্থতি ওই কারখানাটির মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। তিনি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। ওসি কুদ্দুস নামেও তিনি পরিচিত। শ্রমিকদের অভিযোগ, ফের আগের মতোই মামলার ভয় দেখাচ্ছেন তিনি। পুরো অর্থ পরিশোধ না করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করতে এখনও নানাভাবে শক্তি প্রদর্শন করছেন।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকে পুঁজি করে রাজধানীর মালিবাগের ড্রাগন সোয়েটারের প্রায় ৫০০ শ্রমিককে চাকরিচুত্য করা হয়েছিল। লকডাউন শুরু হলে ২৬ মার্চ থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর এই শ্রমিকরা আর কারখানাটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। তবে শ্রমিকরা ওই সময় থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সার্ভিস বেনিফিট ও প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ ন্যায্য পাওনার দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ, দেনদরবার— এমন কিছু নেই, যা তারা করেনি। পাওনা বঞ্চিত শ্রমিকরা বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অনশন ও ঝাড়ু মিছিল করেছে। সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি পর্যন্ত দিয়েছেন। তবু শ্রমিকদের দাবি মানেননি কারখানাটির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

দীর্ঘ আন্দোলনের পর গেল ১২ অক্টোবর কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরির্দশন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়ের সভাপতিত্বে অধিদফতরের সভাকক্ষে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওই কারখানার চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছসহ শ্রমিক ও বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সবার সম্মতিতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়, তার মধ্যে রয়েছে— প্রত্যেক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে চাকরির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিবছর চাকরির জন্য ১৫ দিনের মূল মজুরি মালিক কতৃপক্ষ পরিশোধ করবে; জমা থাকা সাপেক্ষে ২০১৮ সালের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রত্যেক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে বাৎসরিক ছুটির (অর্জিত ছুটি) পাওনা শ্রম আইন অনুযায়ী মালিক কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে; শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার সব অর্থ মালিকের কাছে থাকা হিসাব অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। ৭ নভেম্বর, ২২ নভেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ২২ ডিসেম্বর— এই চার তারিখে চার কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করার বিষয়ে চুক্তি হয় বৈঠকে।

তবে মালিক ওসি কুদ্দুস চুক্তি করেও তা মেনে নেননি। পাওনার প্রথম কিস্তি তুলতে গেলে ৭ অক্টোবর অনেক শ্রমিক বাধার মুখে পড়ে। করপোরেট শাখার দুজন সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার তরিকুল হক ও আসাদুল হক সজলকে কারখানাটি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রোডোকশন শাখার (নিটিং ও লিংকিং) ৩০০ শ্রমিকের কোন পাওনা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো শ্রমিককে সার্ভিস বেনিফিট বা অর্জিত ছুটির টাকা দিতে অসম্মতি জানানো হয়। এতে শ্রমিকরা পাওনার প্রথম কিস্তি নেয়নি।

এর আগে কারখানাটির শ্রমিক আব্দুল কুদ্দুস সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, পাওনার ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়ে আমরা চুক্তিতে সম্মত হয়েছি। পাওনা প্রায় সাত লাখ টাকার মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী তিন লাখ টাকার কিছু বেশি পাবো। কিন্তু ৭ তারিখ কারখানাটিতে গেলে আমার পাওনা এক লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ টাকা দেখানো হয়। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে সেখানে সাইন করে প্রথম কিস্তি নিতে বলে। আমরা তা মেনে নেইনি। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম কিস্তি পরিশোধ না করায় আমরা তা গ্রহণ করেনি। সেখানে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরির্দশন অধিদফতরের পরিদর্শকরা ছিলেন। তারাও দেখেছেন চুক্তি মানা হয়নি। আমরা জেনেছি তারা সেইভাবেই প্রতিবেদন দিয়েছে।

শ্রমিক কুদ্দুস আরও জানান, ৭ নভেম্বর করপোরেট শাখার দুজন সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার তরিকুল হক ও আসাদুল হক সজলেকে কারখানাটি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রোডাকশনে যারা কাজ করতেন প্রায় ৩০০ জন শ্রমিককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের কোন পাওনা নেই। অথচ সরকারের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় ৫০০ শ্রমিকেরই পাওনা রয়েছে। এছাড়া যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ৮৭ জন শ্রমিকের সার্ভিস বেনিফিট ও অর্জিত ছুটির টাকা পাওনার তালিকায় ওঠানো হয়নি। তাদের শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হবে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে। আর ৮৯ জনের শুধু সার্ভিস বেনিফিট ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে, কিন্তু তাদের অর্জিত ছুটির টাকা দেওয়া হবে না।

অবরুদ্ধ ড্রাগন সোয়েটার মালিক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর