Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নই সরকারের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী


১৬ নভেম্বর ২০২০ ০১:০৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নই সরকারের মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্রকে সুসংহত, শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো- এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে।

রোববার (১৫ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭-এর আওতায় ওই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। প্রস্তাবটি নিয়ে টানা পাঁচদিন আলোচনা করেন সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যরা। মোট ৭৯ জন সংসদ সদস্য ১৯ ঘণ্টা ৩ মিনিট আলোচনা করেছেন। সংসদ নেতার বক্তব্যের পর প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ সময়সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। প্রস্তাবটি পাসের সময় সংসদ ভবনে প্রেসিডেন্ট বক্সে উপস্থিত থেকে অধিবেশন প্রত্যক্ষ করছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এর আগে ৯ নভেম্বর মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি স্মারক বক্তৃতা করেন। প্রস্তাবটি পাসের আগে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গ্রহণকালে সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণটি শোনানো হয়।

আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কর্মময় জীবন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা কিন্তু একদিনে আসেনি। স্বাধীনতা দীর্ঘ দিনের তার লালিত স্বপ্ন। সেটা তিনি নিজে বলেছেন। তিনি যখন যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলতে লাগলেন তখন স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশীয় আন্তর্জাতিক চক্র তার যাত্রাপথে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করল। রাতের আঁধারে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা শুরু করল। এমনকি ঈদের নামজে পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা হলো। এরপর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তার লক্ষ্য ছিল দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন।’

দেশ ও জনগণের উন্নয়নে জাতির পিতার নেওয়া সমবায় কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিটি গ্রামে বাধ্যতামূলক সমবায় করতে চেয়েছিলেন। জমির মালিক হবে কৃষক। উন্নত সার-বীজ সরাসরি তাদের কাছে যাবে। যা থেকে তিনগুণ ফসল উৎপাদন হবে। কৃষকের ফসল কৃষকরাই ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করবে। এতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে দেশ। সমবায় সংক্রান্ত বঙ্গবন্ধুর ওই উদ্যোগ সফল করতে পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকার।’

জাতির পিতার বাকশাল গঠনের কারণ ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘একটি বিপ্লবের পর অনেক কিছুই ঘটে। যাদের অর্থ আছে, লাঠি আছে, তারা সবকিছু দখলে নিতে চায়। তাই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কেউ যাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক অধিকার যেন জনগণের কাছে পৌঁছায়, সেজন্য একটি সিস্টেম চালু করতে চেয়েছিলেন। কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি শেষ করতে পারেননি।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা প্রহসন করে নির্বাচনি সিস্টেমটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা সিস্টেমটা পুনরুদ্ধার করেছি।’

করোনা সংকটে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে করোনা সামলাচ্ছি। অপরদিকে অর্থনীতির গতি যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে যা দরকার তা দিয়ে মানুষের জীবন-যাত্রা যাতে সচল থাকে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা আমরা রেখে দিয়েছি। যখন যা প্রয়োজন, আমরা তার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে। এই সংকটের মধ্যেও হঠাৎ বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এর উদ্দেশ্য কি?’ তিনি বলেন, ‘এই করোনার সময়েও যাতে অর্থনীতি সচল থাকে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিচ্ছি। এতে অসুবিধা কোথায়? তারপরও কেন অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে?’

রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে নামমাত্র অংশগ্রহণ করে টাকা পয়সা যা পায়, পকেটে নিয়ে রেখে দেয়। ইলেকশনের দিন ইলেকশনও করে না। এজেন্টও দেয় না। কিছুই করে না। মাঝপথে ইলেকশন বয়কটের নাম দিয়ে বাসে আগুন দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এটা উদ্দেশ্যটা কী?’

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি। দারিদ্রের হার কমাতে পেরেছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলে না। নিজেদের অর্থে বাজেট দিতে পারছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।’

জাতির পিতাকে হত্যা না করা হলে দেশ অনেক আগেই উন্নত হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আসতে পেরেছিল বলেই, আমরা যতটুকু সম্ভব উন্নতি করতে পেরেছি। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তো দেশের উন্নতি করেনি, মানুষের উন্নতি করেনি। করার ইচ্ছাও ছিল না। আমরা যখনই সরকারে এসেছি, জনগণের উন্নয়নের চেষ্টা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব।’ সুবর্ণজয়ন্তীর সেই অনুষ্ঠান সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর