বিনাচাষে রসুনের আবাদ, চলনবিলে ব্যস্ত চাষিরা
১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৮:০০
সিরাজগঞ্জ: মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি শস্য ভাণ্ডারখ্যাত দেশের বৃহত্তর চলনবিল। আর এ বিল জুড়ে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে এবছর শুরু হয়েছে বিনাচাষে রসুনের আবাদ। রসুনের বীজ রোপণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে নারী-পুরুষ, কিশোর ও কিশোরীরা। সাধারণত বিলের পানি কার্তিকের শেষে নদীতে নেমে যায়। অগ্রহায়ণের শুরুতে বিলের পলিমাটি শুকিয়ে ওঠে। তখন কৃষক কোনোরকম হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপণ করেন।
এবছর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত বিনাচাষে ২০ হেক্টর জমিতে রসুন লাগানো হয়েছে। তাছাড়া বীজ রোপণের মাধ্যমে ৪০০ হেক্টর জমি চাষাবাদে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে।
জানা যায়, এবছর চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমিগুলোতে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগেই। এখন আমন কাটা শেষে বিনাচাষে রসুন রোপনের ধুম পড়েছে চলনবিল এলাকার উপজেলাগুলোতে। এসব উপজেলার সর্বোচ্চ অর্থকরী ফসল বিনাচাষে রসুনের বাম্পার ফলনের কারণে প্রতি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা এবার বিনাচাষে রসুনের রোপণ করতে শুরু করেছেন।
তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, চলনবিলের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের মাঝে চলছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। চলনবিলে এখন চলছে রসুন রোপণের ভরা মৌসুম। বিলের যেদিকে চোখ মেলা যাবে সেদিকেই দেখা যাবে নারী-পুরুষেরপাশাপাশি ছোট ছোট ছেলেরা-মেয়েরাও জমিতে লাইন ধরে বসে বসে রসুনের কোয়া রোপণ করছেন।
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহিষলুটি গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও বিনাচাষে ৩ বিঘা জমিতে রসুন লাগানো হয়েছে।
উপজেলার নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, এবারও বিনাচাষেই রসুন উৎপাদনে চারা রোপণ করছেন। সাধারণত কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাদা-মাটিতে বিনা হালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। এবার পানি নামতে কিছুটা দেরি হওয়ায় বীজ বপনের দেরি হয়েছে।
বিনাচাষে রসুন উৎপাদনের বিষয়ে কৃষকরা জানান, কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাদা মাটিতে বিনা হালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। রোপণ শেষে ধানের নাড়া (খড়) বিছিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে, জমিতে (প্রতি বিঘা) ২৫/৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপশাম ও ২ কেজি বোরো সার দেওয়া হয়। রোপনের ২৫/৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ১৫/২০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হয়। ৫০ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফা ১২/১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। রোপণের ৯৫/১০০ দিন পর ফাল্গুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে চৈত্রমাস পুরো চলে রসুন উত্তোলনের কাজ। রসুন মাঠ থেকে তুলে এনে উঠোনে বা খোলায় চড়া রোদে শুকোনো হয়। তারপর কৃষক রসুন গাছসমেত ঝুঁটি বেঁধে ঘরে সংরক্ষণ করেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, চলনবিল এলাকায় বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কাদা মাটিতে কৃষক বিনাচাষে রসুন আবাদ লাভজনক। প্রতিবছর তাই এই পদ্ধতিতে রসুনের আবাদ বাড়ছেই। রসুন চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।